মেঘ-মিলন
পর্ব-২
কিছু প্রশ্ন মস্তিষ্ককে সব সময় মাতিয়ে রাখে,আর কিছু স্পর্শ পাথর বুকেও তাজা গোলাপ ফোটাতে পারে। মেয়েটা যখন অঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন গাড়ি একটা আইলেন ক্রস করে। ড্রাইভার ততোটা খেয়াল করেনি। তাই গাড়িটা একটু ভালো ভাবেই নড়ে চরে উঠলো। মেঘা চোট সামলাতে না পারে আমার দিকেই হেলে পড়লো। মেঘার হাতের বাহুর উল্টো দিকের স্পর্শে আমি কেঁপে উঠলাম। নিজের ভিতরে ভয়ে গেলো এক অদ্ভুত শিহরণ।
আমি অতি তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে একটু সরে বসলাম। কিন্তু মেয়েটা যে প্রচুর ঘুম পাগলী সেটাতো আমার অজানা। এতো বড় একটা হুচোটে তার ঘুম ভাঙ্গেনি। উল্টো বাধিয়ে বসলো আরেক বিপত্তি। সে আরো আমার দিকে ডলে পড়লো।এ কেমন আপদ কপালে জোটলো? আমরা সাধারণত সোফায় বসে যখন টিভি দেখি কিংবা মোবাইল টিপি তখন অদ্ভুত ভাবে নিজের পরিবর্তন লক্ষ করবেন, প্রথমে সোজা হয়ে ১ মিনিট, তারপর সমান্তরাল রেখা হয়ে ৪, ৫ মিনিট।
তারপর শেষে নিজের হুশ ফিরে যখন লক্ষ করেন আপনার পা সোফার উপরে আপনার মাথা নিচে। এই মেয়েটার মাঝেও এরকম কিছু স্বভাব আছে। একবার গায়ে ডলে পড়ছে সরে বসলাম। তারপরেও আবার ডলে পড়লো সরিয়ে দিলাম। এখন সে আমার কোলে মাথা রেখে গুটিসুটি মেরে সুয়ে পড়লো। আমি পুরো ১ মিনিট স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। এই প্রথম কোনো নারীর এভাবে স্পর্শ আমি নিতে পারছি না। কয়েবার ডাকলাম কিন্তু সে নাকে একটু শব্দ করে আবার শুয়ে পড়লো।
আমি এবার এক প্রকার ধাক্কা মারলাম। সে হন্তদন্ত করে উঠলো। উঠেই তো জিবে কামর দিয়ে সেই বিখ্যাত মুচকি হাসি হেঁসে দুই হাতে মুখ লুকালো। তবে তার লজ্জা আর হাসি মাখা মুখে এই মেঘ আর শান্ত হচ্ছে না।তাকে কিছু কথা শুনানো আমার উপর দায়িত্ব হয়ে পড়েছে।।
--হেই ইউ? কমেনসেন্স নেই?
--আসলে, আসলে স,সরি।আমি বুঝতে পারিনি।
--না, কিসের সরি?এটা কোনো ভদ্রতার মাঝে পড়ে?
মেয়েটা একটু থমকে গেলো। আসলে ভুলটাতো তার।আর আমি যেই কড়া কন্ঠে কথা বলছি ভয় পাওয়ারই কথা। তবুও মেয়েটা আমতা আমতা করে বললো...
--দুই দিন ধরে ঘুমাতে পারি না তো তাই একটু বেশিই ঘুমে মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম।
--মিথ্যা বলছেন কেন? দেখে মনে হচ্ছে এটা আপনার পুরনো অভ্যাস?
--আশ্চর্য আপনি জানলেন কি করে?
--তার মানে অনুমান সঠিক ছিলো?
--আসলে আমি বাসে উঠলে এভাবে ঘুমিয়ে পড়ি।
--কি! সবার কুলো এভাবে ঘুমান?
--আরে ধ্যাত কি বলছেন? আমার বান্ধবী প্রমা আমার সাথে সব সময় আসা-যাওয়া করে। ওর একটা এক্সাম থাকার কারনে সে এবার আমার সাথে আসতে পারেনি। আমি তার কুলে সব সময় এভাবে ঘুমাতাম। আজকে সে আসার আগে অনেক বার সতর্ক করেছিলো যেন কারো কুলে না ঘুমাই। কিন্তু একটা কথা কি জানেন? "মানুষ অভ্যাসের দাস" ।
--ইট’স ওকে। ইন ফিউচারে সাবধান। যখন আপনার বান্ধবীর বিয়ে হয়ে যাবে তখন?
--সেটাতো ভাবিনি। মনে হচ্ছে নতুন অভ্যাস করতে হবে।
--তার আর দরকার নেই। এই অভ্যাসটা ছাড়ানোর জন্য আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে, চাইলে দিতে পারি।
--ওয়াও! প্লিজ তাড়াতাড়ি বলেন,
--বাসে উঠার সময় পাঁচ টাকা দিয়ে দড়ি কিনে নিবেন, সিটে বসার পর দুই হাত আর পুরো শরীর জানালার গ্রিলের সাথে বেঁধে রাখবেন।দুই তিন বার ট্রাই করলেই ইনশাআল্লাহ আরোগ্য পেতে পারেন।
--ঠাট্টা করছেন?
--সঠিক যেটা সেটাই বললাম।আজকে আমি ছিলাম,কাল অন্য কেউ থাকবে।তবে সবাই আমার মতো না। কেউ না কেউ সুযোগ নিবে।তখন হাজার কিছু করলেও সেই দাগটা মুছবে না। আশা করি, কি বুঝাতে চেয়েছি বুঝতে পেরেছেন।
--হুমমম। আচ্ছা একটা জিনিস তো বাকি পরে আছে,
--কি?
--বাসের ভাড়া। আপনাকে তো টাকাই দেওয়া হয়নি।
--আমাকে কি আপনার বাসের হেল্পার মনে হয়?
--তা কেন?
--তাহলে চুপচাপ বসে থাকেন।
--দেখুন আমি পৃথিবীতে কারো পাওনা অপূর্ণ রেখে যেতে চাই না।আপনাকে টাকা নিতে হবে।
--ওহ্ তাই?
--হুম
--তাহলে হিসেবটা হয়ে যাক?
-- কিসের হিসাব?
-- এই সিটের ভারা ৫০০। আপনি তিন ঘন্টা যাবৎ আমার সাথে ছিলেন টাকা দেননি। পাঁচশটাকার সুদ তিন ঘন্টায় ছঁয়শত টাকা। তার চক্রবৃদ্ধি আছে।
-- সুদ দেওয়া নেওয়া অন্যায়।আচ্ছা কত হয়েছে বলেন?তবুও আমি দিয়ে দিচ্ছি।
--যাওয়ার সময় হিসেব করে বলবো।
-- ঠিক আছে।
সময়টা কিভাবে কেঁটে গেলো বুঝতে পারছি না। বাস থামলো একটা নদীর পারে। ছোট খাটো একটা ঘাট। ছোট ছোট শিপ অনেক গুলো দেখা যাচ্ছে রোড থেকে। আমি মনে করেছিলাম আমি বোধ হয় যায়গায় চলে এসেছি। কিন্তু মোবাইলের লোকেশন বলছে আরো আধা ঘণ্টা বাকি আছে। পাশে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা উঠে দাড়িয়েছে।আমাকে কিছু না বলেই তরিঘরি করে নেমে পড়লো।
আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে সিটে হেলান দিয়ে ভাবলাম, মানুষের প্রয়োজনে পা অব্দী ধরে,কিন্তু একটা সময় যখন প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় আপনার সাথে কথা বলার মতোও তার সময় হয়ে উঠে না।মেয়েটার অবস্থাও সেই রকম কিছুই। যখন সিট ছাড়ছিলাম না তখন ভ্যবলার মতো তাকিয়ে ছিলো। তারপর জানালার পাশের সিটটাও চেয়ে বসলো। কি ভেবে যেন দিয়ে দিলাম। আর এখন এমন একটা ভাব ধরে চলে গেলো মনে হচ্ছে আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি।
ওহ ভালো কথা সে তো বলেছিলো ভাড়া দিবে।তাহলে কিছু না বলে চলে গেলো কেন? ভাড়া কি আমি তার কাছ থেকে নিতাম নাকি? বলে গেলো পারতো। কেন জানি মেয়েটা নেমে যাওয়াতে যায়গাটা শুন্য লাগছে। কেন এই অনুভুতি হচ্ছে মনের মাঝে ঠিক ধরতে পারছি না।কিছু কিছু স্বল্প সময়ের স্মৃতিও মনে সারা ফেলে। আমার পাথর মনে এভাবে কেউ সারা ফেলবে ভাবিনি কখনো। তবে কি আমিও স্বল্প সময়ের জন্য সেই শ্যামলতার রূপের মাধুর্যের মাঝে নিজেকে নিঁখোজ করেছিলাম?
ধ্যাত, আজকাল কি সব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা করে সময় নষ্ট করি। চলার পথে কত পরিচয় হয়। কত মানুষের সাথে কত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত হয়। দূরে গেলে কোনো একদিন ঠিকই ভুলে যেতে সক্ষম। আমিও পারবো।এটাতো সামান্য মোহ মায়া।এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই।ভাগ্যক্রমে দেখা হয়েছে আবার চলে গেছে।এটা স্বাভাবিক। আমার চিন্তা এখন এটা নয়, আমার চিন্তা ভিন্ন।গালিবকে একটা ফোন দেই।সব ঠিক ঠাক আছে কি না।
--হ্যালো?
--কি রে? কোথায় তুই?
--আর বিশ পঁচিশ মিনিটের মতো লাগবে।
--দূর, কখন এসে স্টেশনে বসে আছি।
--আচ্ছা সব ঠিকঠাক আছে তো?
--আছে।আচ্ছা তুই ডেকোরেশনের লোক সেজে আসবি কেন? আমার বন্ধু সেজে আসলেই তো পারতি?
--না। দুইটা ক্যারেক্টার আমার প্রয়োজন।
--মানে?
--মানে বলবি এটা আমার বন্ধ + ওদের এই ডেকোরেশন। আচ্ছা তুই কথা বলেছিলি ডেকোরেশনের লোকের সাথে?
--হ্যা। ওনি বলেছে কোনো সমস্যা নেই। আচ্ছা কেন এতো কিছু?তোর প্লেনটা সঠিক বুঝতে পারছি না।
--এসে বলবো। তুই শুধু আমাকে সাহায্য করবি ব্যাস।
--হ্যা, করবো। কিন্তু ফুপির আবার কোনো ক্ষতি করবি না তো?
--তোর ফুপি যদি কোনো অন্যায় না করে অবশ্যই কোনো কিছু করবো না।
--তোকে নিয়ে বিশ্বাস নেই।
--তাহলে ফিরে যাচ্ছি।
--এই, না, না। তোর যা ইচ্ছে তাই করিস।তবুও তুই আস।
--ওকে। ওয়েট কর।
ফোনটা রেখে দিয়ে একটা বিলেন মার্কা দিলাম। কোনো রকম তথ্য উদঘাটন করতে পারলেই হলো। ছোট বেলায় প্রাইমেরি স্কুলের গাইড বই গুলোতে নিশ্চিয়ই দেখেছি স্পষ্ট লিখা ছিলো একের ভিতর সব,একের ভিতর অনেক।আরো অনেক কিছু। আমার উদ্দেশ্যও অনেক গুলো। একটা ইস্যু ধরে অনেক গুলো উদ্দেশ্য সফল করবো ইনশাআল্লাহ। যেহেতো প্রাইমেরি স্কুলের গাইড বইয়ের কথা মনে পরেছে তাহলে আমার করা একটা বোকামির কথা উল্লেখ করি।
আমি আগে মনে করতাম "একের ভিতর অনেক, একের ভিতর সব," এগুলো গাইডের নাম। তার ফাকে যে "লেকচার " "পাঞ্জেরি"জুপিটার" ইত্যাদি লিখা থাকতো সেটা আর নাম হিসেবে ধরতাম না।আমি একলাই সেই বোকা লোকটা ছিলাম নাকি আমার মতো কেউ আছে সেটা অনেক ভাবি৷ ছোট বেলার আরো অসংখ্য বোকামি আছে যেমন চাঁদের মা বুড়ির সুতো। যেগুলো চুলে দিলে চুল সুন্দর হয়।ছোট বেলার একটা বড় অংশ কেটে যায় এইটা ভাবতে ভাবতে।
এক সময় হুট করে সে ভাবনা গুলো মন থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় আমরা হদিস পাই না। হুমায়ুন আহমেদ ঠিকই বলেছিলেন, সেই ভাবনা গুলো যেদিন মন থেকে বিলুপ্ত হবে তখন বুঝে নিতে হবে তার শৈশব কাল শেষ।সে কৈশোরে পা রেখেছে। কি ভাবতে গিয়ে কি ভাবছি? বর্তমানের প্লেন ভাবতে গিয়ে শৈশবে হাড়িয়ে গেলাম। আসলে মনতো এমনি। পৃথিবীর সব থেকে দ্রুততম কিছু একটা। সেকেন্ডের ভিতরে শৈশব কৈশোর জীবনের স্মৃতি আবার অদূর ভবিষ্যতে সে চলে যেতে পারে। তাও সেকেন্ডের ভিতরে।
গালিব হলো আমার মেঝো মামার ছেলে।
ওর সাথে পরিচয় নিউইয়র্কে।আমি যেই ফ্লেট ভাড়া নিয়েছিলাম সেটা একটু ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছিলো।প্রতি মাসে বাবার থেকে এভাবে টাকা চাওয়াটা কেমন যেন লাগতো।অবশ্য বাবাকে বলতে হতো না। প্রতি মাসেই আমার একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিতো। তবুও নিজের কাছে কেমন যেন লাগতো। এতো টাকা ব্যয় সেটা নিতে পারছিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ভার্সিটির কোনো প্রবাসী স্টুডেন্টকে রুম শেয়ার করা যেতে পারে।
ভার্সিটির ফেইসবুক গ্রুপে স্টেটাস দিলাম।সাথে ঠিকানা সহ। বিকেলের দিকে কেউ কলিংবেল বাজালো। তখন তার সাথে সামন্য পরিচয় হলো। সে এখানে থাকতে আগ্রহী। প্রবাসীদিরের মাঝে খুব ভালো একটা অভ্যাস আছে। সেটা হলো তার সঙ্গীদের পরিচয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানা। অবশ্য আমি জানতে চাইনি। সে নিজের ইচ্ছেই আমাকে জিজ্ঞেস করতো আমি সারাদিন এভাবে বিষন্ন মনে থাকি কেন? বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পর আমার পরিচয় দেই।
ভাগ্য বসতো তার পরিচয় বেড়িয়ে আসলো সে আমার মেঝো মামার ছেলে। এটা অবশ্য কুইনসেডেন্ট। অনেকে ভাবতে পারেন এগুলো গল্পে বা সিনেমায় হয়, তবে বেপারটা সে রকম না। বাস্তবে এরকম অনেক উদাহরণ আছে।আপনিও খুঁজে পেতে পারেন আপনার কোনো নিকট আত্মীয়কে তবে তার জন্য আপনার মাঝে একটা গুন থাকা লাগবে। সেটা হলো মানুষকে জানার প্রবনতা। হাই, হ্যালোর মাঝে সীমাবদ্ধ রাখলে তো আর হবে না।মানুষকে জানার প্রবনতা মনের মাঝে তৈরি করতে হবে। একটা সময় বাস থামলো। আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা কিছু ফেলে গেলো কি না। কিন্তু না। মেয়েটা কিছু ফেলে যায়নি। তবে চিন্তার বিষয় মেয়েটা কেন এতো হন্তদন্ত করে নেমে গেলো!
--কেমন আছিস?
--হুম৷ ভালো।
--সেই কখন থেকে বসে আছি।
--আমি তো আর বাসের ড্রাইভার না যে নিজের ইচ্ছে মতো চালাবো।
--তোর ত্যারা ত্যারা কথা গুলো আর গেলো না। চলতো?
--সব ঠিকঠাক আছে তো?
--হুমম। আচ্ছা ডেকরেশনের পরিচয়ে থাকতে চাইছিস কেন বলতো?
-- তোদর বাড়ির মানুষ গুলোর আসল পরিচয় জানতে।
--মানে?
--পরে বলবো কোনো এক সময়।
--ঠিক আছে।
গালিব নিজস্ব গাড়ি নিয়ে এসেছে। চিন্তায় পড়ে গেলাম গাড়িতে উঠবো না নাকি উঠবো না। মনে হচ্ছে না উঠাই বেটার।
--কি-রে দাড়িয়ে আছিস কেন?
--রিকশা করে যেতে হবে।
--কি অদ্ভুত, গাড়ি থাকতে তুই রিকশা করে কেন যাবি?
--তুই বুঝবি না। তুই তোর বাড়ির ঠিকানা দিয়ে যা।
--তার দরকার নেই রিকশা ওয়ালকে বলবি আমার পিছনে পিছনে আসতে
--ওকে।
বিয়ের বাকি আরো ৩ দিন। এই কিছুদিনের ভিতরেই সব কিছু আমাকে জানতে হবে।। আর ছদ্মবেশে গেলে অনেক সহজ হবে বেপারটা।জানতে পারবো কে কি ধরনের মানুষ। তাদের বাড়ির অনেকের উপর আছে আমার ঘৃণা। ১ম নাম্বার তালিকায় আমার আম্মু, দ্বিতীয় নাম্বার আমার বড় মামা, তৃতীয় নাম্বার হচ্ছে আমার বৃদ্ধ নানী। যতটুকো মনে আছে,তারাই সেদিন আব্বু আম্মুর ডিভোর্সের জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
অবশ্য আব্বু-আম্মুর দোষ কম ছিলো না। আমার সামনেই ঝগড়া লেগে থাকতো সব সময়। আমি দরজার আড়ালে দাড়িয়ে সব কিছু দেখতাম। সে সময় ছোট হলেও একটু একটু বুঝতে পারতাম। তবে কি নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো সেটা বুঝতে পারতাম না।তাদের দুজনের ঝগড়ার ফলে শৈশবের অনেক দিন অতিবাহিত হয়েছে আমার না খেয়ে। আমার নিরবের ফেলা প্রতিটা অশ্রু জানতো কিভাবে দিন পার করেছি।
পরিবার থেকে এই ডিপ্রেশন গুলো শিশুকে হোক বা সুস্থ মানুষ হোক তাকে পুরোপুরি মানুষিক রুগী বানিয়ে দেয়। ফলে সে দীর্ঘ দিন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।এক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে তার জীবনের মোর ঘুড়িয়ে দেয়। পরে সমাজ বলে সে খারাপ। কিন্তু সমাজের মানুষের চোখে এটা কখনো পড়ে না,যে তার খারাপ হওয়ার উৎপত্তি স্থল কোথায়? কি কারণে ছেলেটা আজ নেশায় মগ্ন? কি কারনে মেয়েটা আজ বেপরোয়া ? কেন সে আজ এই খারাপ পথে।
সেই দিকটা খতিয়ে দেখার মতো সময় নেই আমাদের সমাজের।তবে হ্যা সমাজের বলা মন্দ মন্তব্যে তার কোনো যায় আসে না। সমাজ দিয়ে সে কিছু করবে না।ভ্রাতৃত্ব নামের বন্ধনের সুতো সে কবেই কেটেছে পরিবারের দেওয়া অদৃশ্য সেই কষ্টে। বিশাল এক বাড়ি। তিন দিন আগে থেকেই পুরো বাড়িতে বিয়ের সাজ সজ্জা। ছোট বোনের বিয়ে কোথায় মন খুলে একটু সবার সাথে আনন্দ বিলাবো,কিন্তু তার আর উপায় নেই। মায়ের মুখোশ খুলতে ঠিকই আমাকে সেই আনন্দটা মাটিচাপা দিতে হচ্ছে।
লেখক: নিহান আহমেদ আনিছ
Part 5 kothay pabo
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Give your opinion, please!