তুমি আছো তাই

(শেষ পর্ব)



তারমধ্যেই একদিন সন্ধ্যায় নিলয়ের বাবা নিলয়কে ডেকে পাঠালো।

-বাবা তুমি আমাকে ডেকেছিলে??

-হুম,,আয় আমার পাশে বস।

-হুম বাবা বলো কি বলবে।

-দেখ নিল,,আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে।তাই আমার ব্যবসা তোকে দেখার দায়িত্ব দিয়েছি।তুই আমার সবচেয়ে ভরসার জায়গা।কিন্তু এভাবে আর ক'দিন??

-কিভাবে বাবা??

-আমরা বাড়িতে ৩ জন আছি।তাই আমি চাই যে আমরা ৪ জন হয়ে যাই।

-৩ জন,৪ জন।এসব কি বলছো বাবা??আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

-আমি বাড়িতে নতুন সদস্য আনার কথা বলছি নিল।

-ওহ তাই বলো।নিলুর বিয়ে দিতে চাও বুঝি??

-না,,আমি তোর বিয়ে দিতে চাই।তোর বিয়ের কথা বলছি।নিলু আরো লেখাপড়া করুক।মেয়েদেরকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া ঠিক না।মেয়েদেরও নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিৎ।নইলে মাঝে মাঝে পরের ঘরে মাথা নিচু করে চলতে হয়।

-আচ্ছা বাবা তা তো বুঝলাম।কিন্তু এখনই আমার বিয়ে...ইয়ে মানে.....

-আমি কোনো মানে টানে বুঝিনা।আমার বউ মা চাই।চাই-ই চাই।

পেরিয়ে গেলো কিছুদিন।নিলয় আর আগের মতো মীরার সাথে কথা বলেনা।কল দিলে কল কেটে দেয়।ব্যস্ততা দেখায়।মীরা অনেকবার দেখা করার কথা বলেছে কিন্তু নিলয় মীরার মুখের উপর না বলে দিয়েছে।সে নাকি ব্যবসার কাজে অনেক ব্যস্ত।অথচ এই নিলয়ই এক সময় মীরাকে দেখার তীব্র ইচ্ছায় রাত-বিরেতে মীরার বেলকনিতে এসে উঠতো।
নিলয়ের এমন অস্বাভাবিক আচরণ খুব ভাবাচ্ছিলো মীরাকে।

-নাহ যে করেই হোক,নিলয়ের সাথে আমাকে কথা বলতেই হবে।ও কেন এমন করছে সেটা জানতেই হবে।এদিকে আমি ওর জন্য পাগল হয়ে মরবো আর ও আমাকে নিছকই ব্যস্তাতা দেখিয়ে এড়িয়ে যাবে তা তো হয়না।ওকে আমার সাথে দেখা করতেই হবে।

মীরা নিলয়কে অনেক রিকুয়েস্ট করলো দেখা করার জন্য।মীরার অনেক কথার পর নিলয় দেখা করতে রাজি হলো।মীরা যথাসময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে হাজির।কিন্তু নিলয়ের এখনো খবর নেই।পাক্কা ৩৩মি. পর নিলয়ের আগমন ঘটলো।

-কি ব্যপার এতো লেইট যে??অন্য সময় তো আমি লেইট করলে আমাকে বকতে।

-দেখো আমি তোমার মতো এতো আজাইরা না।অনেক কাজ আছে আমার।সব কাজ সেরে আসতে হয়েছে।কি বলবে বলো।তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে আমাকে।

-নিল আমি আজাইরা??আর কি এমন কাজ তোমার যে আমার পাশে বসে ২মি. কথা বলার সময়টাও তোমার নেই??

-শুনো,,এতো কথা না বলে কাজের কথা বলো।আমাকে ডেকে এনেছো কেন??

-আমাকে এভোয়েড করার কারণ কি??(মীরা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে উদাসভাবে দ্রুত কথাটা বলে দিলো)

$ads={1}

-এভোয়েড?? কোথায় এভোয়েড??(নিলয় যেন কিছু লুকাতে চাইলো)

-দেখো নিল,,আমি তোমাকে বুঝি।তোমাকে অনেকদিন ধরে চিনি।অনেক দিন ধরে আছি তোমার সাথে।তুমি প্লিজ আমাকে কোনো মিথ্যে বলো না।(চোখের কোণে জমে থাকা জল মুছতে মুছতে মীরা কথাটা বললো।)

-তুমি যখন বুঝতেই পারছো যে আমি মিথ্যে বলছি তাহলে এবার আমার সত্যিটা বলাই উচিত।

নিলয়ের কথায় মীরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।

-মীরা আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।তুমি আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগের চেষ্টা না করলে আমি খুশি হবো।(নিলয় কথাগুলো অন্য দিকে তাকিয়ে একনাগাড়ে বলে গেলো)

নিলয়ের কথা শুনে মীরা বসে পড়লো।অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলতে থাকে মীরা।

-দেখো মীরা,আমাদের মাঝে যা ছিলো আমি সব মন থেকে মুছে ফেলেছি।আশা করি তুমিও সেইম কাজটা করবে।আমাকে আর কন্টাক্ট করার চেষ্টা করো না।চলি।ভালো থেকো।

-ভালো কিভাবে থাকবো বলতে পারো??

মীরার কথায় নিলয় থেমে দাঁড়ালো।

এবার মীরা চিৎকার করে বলে উঠলো..

-কিভাবে ভালো থাকবো আমি মি.নিলয় মির্জা??কিভাবে??প্রতারিত হয়ে কেউ ভালো থাকে শুনেছেন কখনো??

-মী..মীরা লিসেন....

-ইউ যাস্ট শাট আপ অ্যান্ড লিসেন টু মি মি. গ্রেইট নিলয় মির্জা।আমার কোন অপরাধে আমার সাথে এমন করলেন আপনি??কি দোষ ছিলো আমার?? কোনটা অন্যায় ছিলো??কিসের শাস্তি এটা?? নাকি এক নারীতে মন ভরেনি আপনার??

মীরার এই কথায় নিলয় কসিয়ে মীরার গালে একটা চড় বসালো।

-ছিঃ,,ইউ আর সো চিপ মীরা।এতো চিপ মেন্টালিটি তোমার??ছিঃ।এই জন্যই তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করা উচিত না।বেশ করেছি বাবার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে।বেশ করেছি আমি।এতো চিপ মেন্টালিটির মেয়ে দরকার নেই আমার।যাস্ট গেট লস্ট ফ্রম মাই লাইফ ইউ চিপ গার্ল।আই যাস্ট হেইট ইউ।

কথাগুলো বলে নিলয় চলে গেলো।মীরাকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না আর।মীরা সেখানে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে গেলো।

জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে নিজের বেডরুমে আবিষ্কার করলো মীরা।


Post a Comment

Give your opinion, please!

নবীনতর পূর্বতন