ভালোবাসার শক্তি
পর্ব:-৭
মামুন ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়ে, প্রিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। হাত থেকে অঝোর ধারায় রক্ত পড়ছে। মামুন কোন উপায় না পেয়ে দৌড়ে দরজাটা খুলে দেয় এবং পাশের দেয়ালে নিজের মাথা বাড়ি দিতে থাকে, এবং সেও অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে। আয়েশা বেগম ঘরে ঢুকে প্রিয়া আর মামুনের এই অবস্থা দেখা নিজেও অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা,
দৌড়ে প্রিয়ার কাছে যান, প্রিয়ার হাত থেকে প্রচুর রক্ত পড়ছে। অনেক কষ্টে প্রিয়াকে বিছানায় তোলেন, প্রিয়ার হাতের যেই অবস্থা তাতে সেলাই করা ছাড়া কোন উপায় নেই। কিন্তু সেলাই করা আয়েশা বেগমের পক্ষে সম্ভব নয়। উনি প্রিয়ার হাতটা ভালো করে ওয়াস করে ব্যান্ডেজ করে দেন। প্রিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, এদিকে মামুনও অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। মামুনকেও টেনে বিছায় তোলেন। মামুনের মাথা বেয়ে রক্ত পড়ছে.....
আয়েশা বেগম ছেলে আর ছেলের বৌয়ের এমন অবস্থা দেখে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। দুজনকেই ভালো করে ব্যান্ডেজও করে দেন। মামুন পুরো রুম তছনছ করে ফেলেছে। আয়েশা বেগম ধীরে ধীরে পুরো রুম পরিষ্কার করে ফেলেন। প্রিয়ারও জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরতেই দেখে শাশুড়ি রুম পরিষ্কার করছে আর মামুন তার পাশেই শুয়ে আছে, এবং মামুনের মুখে, মাথায় রক্ত এবং মাথায় ব্যান্ডেজ।
প্রিয়া মামুনের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে পাগল হয়ে যায়,
--মা, কি হয়েছে ওনার? ওনার মাথায় ব্যান্ডেজ কেনো?
প্রিয়ার জ্ঞান ফেরায় আয়েশা বেগম যেনো সস্তি পেলেন।
--মা, কি হয়েছে ওনার? কথা বলছেন না কেনো?
আয়েশা বেগম সব খুলে বলেন।
প্রিয়া মামুনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। ওর যে হাত কাঁটা, সেদিকে তার কোন খেয়ালই নেই। প্রিয়া সারা রাত মামুনের পাশে বসে কাঁদতে থাকে। সকালে মামুনের জ্ঞান ফিরে, মামুনকে নাড়াচাড়া করতে দেখে প্রিয়ার কলিজায় যেনো পানি আসে। মামুন প্রিয়ার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে, প্রিয়াও মামুনের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। মামুনের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। এই চোখের পানি ছাড়া আর কোন ভাবেই যে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করতে পারছে না।
--কেনো করেছেন এমন?
--
--এর চেয়ে ভালো ছুরিটা আমার গলায় বসাতেন, আমার কোন আফসোস থাকতো না।
--
--কেনো আপনি নিজের ক্ষতি করলেন? কেনো আমাকে অপরাধী বানাচ্ছেন?
--
--আপনার যদি কিছু হয়ে যেতো, তাহলে আমি কি নিয়ে বাঁচতাম? আমিও মরে যেতাম...
(মামুন মাথাটা প্রিয়ার কোলের ওপর রাখলো)
--আপনার খুব লেগেছে? কেনো এমন করলেন? আমার তো কিছুই হয় নি। সামান্য একটু লেগেছে, ব্যথাও করছে না। আর আপনি এটা কি করলেন?
--(মামুন উঠে আলমারি থেকে শিকলটা বের করে প্রিয়ার কাছে নিয়ে আসে, এবং হাতটা বাড়িয়ে দেয়)
--কক্ষনো না, আমাকে মেরে ফেললেও না।
আয়েশা বেগম ছেলে আর বৌয়ের জন্য নাস্তা নিয়ে আসেন।
--মা, আপনি কেনো কষ্ট করতে গেলেন, আমি বানাতাম।
--থাক, তোমার এই কাটা হাতে পারবে না,,,, আমার ছেলে কেমন আছে?(আয়েশা বেগম)
--এই যে দেখেন কিভাবে আমার কোলে শুয়ে আছে, যেনো কিচ্ছু যানে না।
--কেনো এমন করলি বাবা? যদি বৌয়ের কিছু হয়ে যেতো? যদি তোর সন্তানের কিছু হয়ে যেতো?
--থাক মা, উনি কি আর জেনে বুঝে করেছে?
--তুমিতো বুঝতে, কেনে জিদ করে ভিতরে রয়ে গেছিলে? কেনো আমার কথা শুনোনি?
--আমার ওনার প্রতি বিশ্বাস ছিলো, তাই।
--বিশ্বাসের পরিনাম কি হয়েছে? নিজের চোখেই দেখেছো।
--হুম, আচ্ছা মা, বলুনতো উনি আমাকে চাইলেই মারতে পারতো, চাইলেই কামড় বা আচড় দিয়ে আমার ক্ষতি করতে পারতো। সেটা করেনি কেনো?
--কেনো?
--কারন শরীরটা ওনার, যতো বড় শক্তিই ওনার শরীরে প্রবেশ করুক, এই শরীরটায় ওনার অধিকার বেশি। ধীরে ধীরে উনি আবার ওনার শরীরটাকে আয়ত্ত করতে পারছে। ১ম থেকে এখন পর্যন্ত একবার খেয়াল করে দেখুন।
--এর সাথে রাতের ঘটনার কি সম্পর্ক?
--সম্পর্ক আছে, উনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার পর যদি ওনার সামনে আমি থাকি, তাহলে আমার যেনো কোন ক্ষতি না হয় এই ভয়ে উনি নিজের শরীরটা ফিরে পাওয়ার চেষ্টাটা আরো বেশী করবেন।
--দেখো মা, তোমার মতো করে আমি এতো কিছু ভাবতে পারি না। কিন্তু আমার ভয় হয় যদি তোমার বড় কোন ক্ষতি হয়ে যায়?
--চিন্তা করবেন না মা, আমার কিচ্ছু হবে না।
মামুন চুপচাপ প্রিয়ার কোলে শুয়ে আছে।
আয়েশা বেগম ছেলে পাশে বসেন।
--বাবা, ওর কোন ক্ষতি করিস না, আজ যদি মেয়েটা না থাকতো তাহলে তুইও বেচে থাকতি না, হয়তো বা আমিও। তোর বাচ্চার কথাও ভাবিস।
আয়েশা বেগম ছেলের কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে যান।
--এই যে মিঃ মামুন, উঠুন, নাস্তা করবেন না?
--(মামুন প্রিয়ার কোলে শুয়ে রইলো)
প্রিয়া টেনে সোজা করে বসায়। মামুন প্রিয়ার দিয়ে চেয়ে আছে। প্রিয়া মামুনকে খাইয়ে দেয়।
এদিকে পুরো এলাকা শুনশান হয়ে গেছে। চারদিকে কড়া নিরাপত্তা চলছে, সংক্রমিত কাউকে পেলেই তাকে খাচায় আটকানো হচ্ছে। একদল চিকিৎসক পাঠানো হয় এই এলাকায়। সংক্রমিত কয়েকজন ব্যাক্তিকে নিয়ে গবেষণা করে যানা গেছে এটা কোন ভাইরাস নয়। কিন্তু কি সেটা তারা বলতে পারছে না। তাই আবার নতুন করে কিছু চিকিৎসক পাঠানো হয়। তাদেরও একই অবস্থা।
এটা কি রোগ নাকি অন্য কিছু তা বলতে পারছে না। পর পর ৪দল চিকিৎসক পাঠানো হয়, কিন্তু ফলাফল শুন্য। আয়েশা বেগম টিভিতে এই খবরই দেখছেন। প্রিয়াও মনে করে এটা কোন ভাইরাস নয়, কেনোনা মামুন মাঝে মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারায়, বাকি সময়টাতে ও সুস্থ থাকে। ভাইরাস হলেতো টানা অসুস্থ থাকে। মাঝেমধ্যে এমন অসুস্থ হয় না। এদিকে মামুন আজ প্রায় ১ মাসের মতো হলো কথা বলে না।
চোখের পানি ছাড়া কোন অঙ্গভঙ্গি করেও মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। এলাকায় চিকিৎসকদের দ্বারা কিছু না হওয়ায় পুরো এলাকার মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে। আর কোন উপায় না দেখে এলাকার কিছু জ্ঞানি ব্যাক্তিদের পরামর্শে বাহিরের একজন বড় তান্ত্রিককে খবর দেওয়া হয় তান্ত্রিকের পক্ষ থেকে জানানো হয় তান্ত্রিক আসতে কিছুদিন সময় লাগবে। ততদিন যেনো কেউ বাহিরে না বের হয়।
রাতে মামুন রুমে শুয়ে আছে, প্রিয়াও তার পাশে শুয়ে আছে। হঠ্যাৎ প্রিয়ার ব্যথা শুরু হয়। প্রিয়া বিছানায় ছটপট করতে থাকে। মামুন প্রিয়ার এমন অবস্থা দেখে চিৎকার করা শুরু করে। মামুনের চিৎকার শুনে আয়েশা বেগম দৌড়ে আসে।
--বৌমা, কি হয়েছে তোমার? মামুন কিছু করেছে?(আয়েশা বেগম)
--না মা, আমার.........ব্যথা......
আয়েশা বেগম বুঝতে পারেন.... কিন্তু এই সময় উনি কোথায় যাবেন? মামুন বসে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়েশা বেগম কোন উপায় না পেয়ে সিদ্বান্ত নেন ঘরেই (_____) করবেন।
তাই মামুনকে টেনে রুমের বাহিরে নিয়ে যায়, মামুন ওনাকে পাশ কাটিয়ে আবার প্রিয়ার মাথার কাছে এসে বসে পড়ে। আয়েশা বেগম আবার মামুনকে রুম থেকে বের করার চেষ্টা করেন।
উনি বার বারই ব্যর্থ হন। কিন্তু ছেলের সামনে কিভাবে _____ _____ করবেন? এদিকে প্রিয়া ভীষণ ছটফট করতে থাকে।
--মা, উনি আমার সাথেই থাকুক...
--কিন্তু....?
আয়েশা বেগম কোন উপায় না পেয়ে একটা কাপড় দিয়ে প্রিয়ার বুক থেকে নিচের দিকে ঢেকে নেন মামুন প্রিয়ার মাথার কাছে বসে প্রিয়ার মুখের দিকে চেয়ে আছে। প্রিয়া মামুনের হাতদুটো শক্ত করে ধরে রেখেছে। একটা অবুঝ বাচ্চার মতো মামুন প্রিয়ার পাশে আছে, তার কোন প্রতিক্রিয়া নেই কিছুক্ষণ পর প্রিয়ার _____ শেষ হয়। একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়।
আয়েশা বেগম মেয়েটাকে মামুনের সামনে রাখেন এবং অন্য দিকে চলে যান। কিন্তু মামুনের কোন অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে না। প্রিয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, মামুন সেদিকেই চেয়ে আছে। প্রিয়া মামুনকে মেয়েটার দিকে ইশারা করে বলে...
--আপনার মেয়ে.......
--(এরপর মামুন মেয়েটার দিকে তাকায়)
--কোলে নিবেন না?
--(মামুন চুপচাপ বসে আছে)
--দেখুন আপনার আমানত, আপনার ভালোবাসার প্রতিদান।
--
--মেয়েটাকে একবার আদর করুন না....
--(মামুনের চোখ দিয়ে টুপ করে একফোটা পানি মেয়েটার গায়ে পড়লো)
--আপনি কাঁদছেন? কেনো? আজ তো খুশির দিন। কেনো কাঁদছেন আপনি?
মামুন মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা একদম প্রিয়ার মতো দেখতে। এটা যে খুশির কান্না, সেটা প্রিয়াকে কি করে বোঝাবে? বাবাদের সবচেয়ে বড় ভালোবাসা যে তাদের মেয়ে হয়। মেয়েরও সবচেয়ে বড় ভালোবাসা তার বাবা। মেয়েকে এতো কাছে পেয়ে ও মামুন পারছে না ওকে কোলে নিতে, আনন্দ করতে, একটু আদর করতে।
সেদিন প্রিয়ার হাত কেটে ফেলায়ও এতোটা কষ্ট পায় নি যাতটা আজ পাচ্ছে। তার হাত যে মেয়ের দিকে যাচ্ছে না। কোনো এক অজানা শক্তি বাঁধা দিচ্ছে। প্রিয়া মামুনের হাতটা ধরে মেয়েকে ছোয়ায়। মেয়েকে কোলে তুলে মেয়ের মুখটা মামুনের ঠোঁটে লাগিয়ে দেয়। মামুনের মনটা যেন হালকা হয় মামুন প্রিয়ার দিকে তাকায়, কিভাবে প্রিয়া সব বুঝে ফেলে?
এটাই বু্ঝি ভালোবাসা? মামুনের আজ খুব কষ্ট হচ্ছে, কেনো সে আজ দিনটা উপভোগ করতে পারছে না? ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে, তাহলেই হয়তো প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যাবে যে তাকে দিয়ে এসব করাচ্ছে।
এদিকে এলাকায় তান্ত্রিকও এসে যায়। বুঝতে পারে পুরো এলাকা ঝুড়ে কোনো এক শক্তি ক্ষমতা চালাচ্ছে...............
লেখক :- আবদুল্লাহ আল মামুন
দৌড়ে প্রিয়ার কাছে যান, প্রিয়ার হাত থেকে প্রচুর রক্ত পড়ছে। অনেক কষ্টে প্রিয়াকে বিছানায় তোলেন, প্রিয়ার হাতের যেই অবস্থা তাতে সেলাই করা ছাড়া কোন উপায় নেই। কিন্তু সেলাই করা আয়েশা বেগমের পক্ষে সম্ভব নয়। উনি প্রিয়ার হাতটা ভালো করে ওয়াস করে ব্যান্ডেজ করে দেন। প্রিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, এদিকে মামুনও অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। মামুনকেও টেনে বিছায় তোলেন। মামুনের মাথা বেয়ে রক্ত পড়ছে.....
আয়েশা বেগম ছেলে আর ছেলের বৌয়ের এমন অবস্থা দেখে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। দুজনকেই ভালো করে ব্যান্ডেজও করে দেন। মামুন পুরো রুম তছনছ করে ফেলেছে। আয়েশা বেগম ধীরে ধীরে পুরো রুম পরিষ্কার করে ফেলেন। প্রিয়ারও জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরতেই দেখে শাশুড়ি রুম পরিষ্কার করছে আর মামুন তার পাশেই শুয়ে আছে, এবং মামুনের মুখে, মাথায় রক্ত এবং মাথায় ব্যান্ডেজ।
প্রিয়া মামুনের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে পাগল হয়ে যায়,
--মা, কি হয়েছে ওনার? ওনার মাথায় ব্যান্ডেজ কেনো?
প্রিয়ার জ্ঞান ফেরায় আয়েশা বেগম যেনো সস্তি পেলেন।
--মা, কি হয়েছে ওনার? কথা বলছেন না কেনো?
আয়েশা বেগম সব খুলে বলেন।
প্রিয়া মামুনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। ওর যে হাত কাঁটা, সেদিকে তার কোন খেয়ালই নেই। প্রিয়া সারা রাত মামুনের পাশে বসে কাঁদতে থাকে। সকালে মামুনের জ্ঞান ফিরে, মামুনকে নাড়াচাড়া করতে দেখে প্রিয়ার কলিজায় যেনো পানি আসে। মামুন প্রিয়ার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে, প্রিয়াও মামুনের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। মামুনের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। এই চোখের পানি ছাড়া আর কোন ভাবেই যে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করতে পারছে না।
--কেনো করেছেন এমন?
--
--এর চেয়ে ভালো ছুরিটা আমার গলায় বসাতেন, আমার কোন আফসোস থাকতো না।
--
--কেনো আপনি নিজের ক্ষতি করলেন? কেনো আমাকে অপরাধী বানাচ্ছেন?
--
--আপনার যদি কিছু হয়ে যেতো, তাহলে আমি কি নিয়ে বাঁচতাম? আমিও মরে যেতাম...
(মামুন মাথাটা প্রিয়ার কোলের ওপর রাখলো)
--আপনার খুব লেগেছে? কেনো এমন করলেন? আমার তো কিছুই হয় নি। সামান্য একটু লেগেছে, ব্যথাও করছে না। আর আপনি এটা কি করলেন?
--(মামুন উঠে আলমারি থেকে শিকলটা বের করে প্রিয়ার কাছে নিয়ে আসে, এবং হাতটা বাড়িয়ে দেয়)
--কক্ষনো না, আমাকে মেরে ফেললেও না।
আয়েশা বেগম ছেলে আর বৌয়ের জন্য নাস্তা নিয়ে আসেন।
--মা, আপনি কেনো কষ্ট করতে গেলেন, আমি বানাতাম।
--থাক, তোমার এই কাটা হাতে পারবে না,,,, আমার ছেলে কেমন আছে?(আয়েশা বেগম)
--এই যে দেখেন কিভাবে আমার কোলে শুয়ে আছে, যেনো কিচ্ছু যানে না।
--কেনো এমন করলি বাবা? যদি বৌয়ের কিছু হয়ে যেতো? যদি তোর সন্তানের কিছু হয়ে যেতো?
--থাক মা, উনি কি আর জেনে বুঝে করেছে?
--তুমিতো বুঝতে, কেনে জিদ করে ভিতরে রয়ে গেছিলে? কেনো আমার কথা শুনোনি?
--আমার ওনার প্রতি বিশ্বাস ছিলো, তাই।
--বিশ্বাসের পরিনাম কি হয়েছে? নিজের চোখেই দেখেছো।
--হুম, আচ্ছা মা, বলুনতো উনি আমাকে চাইলেই মারতে পারতো, চাইলেই কামড় বা আচড় দিয়ে আমার ক্ষতি করতে পারতো। সেটা করেনি কেনো?
--কেনো?
--কারন শরীরটা ওনার, যতো বড় শক্তিই ওনার শরীরে প্রবেশ করুক, এই শরীরটায় ওনার অধিকার বেশি। ধীরে ধীরে উনি আবার ওনার শরীরটাকে আয়ত্ত করতে পারছে। ১ম থেকে এখন পর্যন্ত একবার খেয়াল করে দেখুন।
--এর সাথে রাতের ঘটনার কি সম্পর্ক?
--সম্পর্ক আছে, উনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার পর যদি ওনার সামনে আমি থাকি, তাহলে আমার যেনো কোন ক্ষতি না হয় এই ভয়ে উনি নিজের শরীরটা ফিরে পাওয়ার চেষ্টাটা আরো বেশী করবেন।
--দেখো মা, তোমার মতো করে আমি এতো কিছু ভাবতে পারি না। কিন্তু আমার ভয় হয় যদি তোমার বড় কোন ক্ষতি হয়ে যায়?
--চিন্তা করবেন না মা, আমার কিচ্ছু হবে না।
মামুন চুপচাপ প্রিয়ার কোলে শুয়ে আছে।
আয়েশা বেগম ছেলে পাশে বসেন।
--বাবা, ওর কোন ক্ষতি করিস না, আজ যদি মেয়েটা না থাকতো তাহলে তুইও বেচে থাকতি না, হয়তো বা আমিও। তোর বাচ্চার কথাও ভাবিস।
আয়েশা বেগম ছেলের কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে যান।
--এই যে মিঃ মামুন, উঠুন, নাস্তা করবেন না?
--(মামুন প্রিয়ার কোলে শুয়ে রইলো)
প্রিয়া টেনে সোজা করে বসায়। মামুন প্রিয়ার দিয়ে চেয়ে আছে। প্রিয়া মামুনকে খাইয়ে দেয়।
এদিকে পুরো এলাকা শুনশান হয়ে গেছে। চারদিকে কড়া নিরাপত্তা চলছে, সংক্রমিত কাউকে পেলেই তাকে খাচায় আটকানো হচ্ছে। একদল চিকিৎসক পাঠানো হয় এই এলাকায়। সংক্রমিত কয়েকজন ব্যাক্তিকে নিয়ে গবেষণা করে যানা গেছে এটা কোন ভাইরাস নয়। কিন্তু কি সেটা তারা বলতে পারছে না। তাই আবার নতুন করে কিছু চিকিৎসক পাঠানো হয়। তাদেরও একই অবস্থা।
এটা কি রোগ নাকি অন্য কিছু তা বলতে পারছে না। পর পর ৪দল চিকিৎসক পাঠানো হয়, কিন্তু ফলাফল শুন্য। আয়েশা বেগম টিভিতে এই খবরই দেখছেন। প্রিয়াও মনে করে এটা কোন ভাইরাস নয়, কেনোনা মামুন মাঝে মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারায়, বাকি সময়টাতে ও সুস্থ থাকে। ভাইরাস হলেতো টানা অসুস্থ থাকে। মাঝেমধ্যে এমন অসুস্থ হয় না। এদিকে মামুন আজ প্রায় ১ মাসের মতো হলো কথা বলে না।
চোখের পানি ছাড়া কোন অঙ্গভঙ্গি করেও মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। এলাকায় চিকিৎসকদের দ্বারা কিছু না হওয়ায় পুরো এলাকার মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে। আর কোন উপায় না দেখে এলাকার কিছু জ্ঞানি ব্যাক্তিদের পরামর্শে বাহিরের একজন বড় তান্ত্রিককে খবর দেওয়া হয় তান্ত্রিকের পক্ষ থেকে জানানো হয় তান্ত্রিক আসতে কিছুদিন সময় লাগবে। ততদিন যেনো কেউ বাহিরে না বের হয়।
রাতে মামুন রুমে শুয়ে আছে, প্রিয়াও তার পাশে শুয়ে আছে। হঠ্যাৎ প্রিয়ার ব্যথা শুরু হয়। প্রিয়া বিছানায় ছটপট করতে থাকে। মামুন প্রিয়ার এমন অবস্থা দেখে চিৎকার করা শুরু করে। মামুনের চিৎকার শুনে আয়েশা বেগম দৌড়ে আসে।
--বৌমা, কি হয়েছে তোমার? মামুন কিছু করেছে?(আয়েশা বেগম)
--না মা, আমার.........ব্যথা......
আয়েশা বেগম বুঝতে পারেন.... কিন্তু এই সময় উনি কোথায় যাবেন? মামুন বসে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়েশা বেগম কোন উপায় না পেয়ে সিদ্বান্ত নেন ঘরেই (_____) করবেন।
তাই মামুনকে টেনে রুমের বাহিরে নিয়ে যায়, মামুন ওনাকে পাশ কাটিয়ে আবার প্রিয়ার মাথার কাছে এসে বসে পড়ে। আয়েশা বেগম আবার মামুনকে রুম থেকে বের করার চেষ্টা করেন।
উনি বার বারই ব্যর্থ হন। কিন্তু ছেলের সামনে কিভাবে _____ _____ করবেন? এদিকে প্রিয়া ভীষণ ছটফট করতে থাকে।
--মা, উনি আমার সাথেই থাকুক...
--কিন্তু....?
আয়েশা বেগম কোন উপায় না পেয়ে একটা কাপড় দিয়ে প্রিয়ার বুক থেকে নিচের দিকে ঢেকে নেন মামুন প্রিয়ার মাথার কাছে বসে প্রিয়ার মুখের দিকে চেয়ে আছে। প্রিয়া মামুনের হাতদুটো শক্ত করে ধরে রেখেছে। একটা অবুঝ বাচ্চার মতো মামুন প্রিয়ার পাশে আছে, তার কোন প্রতিক্রিয়া নেই কিছুক্ষণ পর প্রিয়ার _____ শেষ হয়। একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়।
আয়েশা বেগম মেয়েটাকে মামুনের সামনে রাখেন এবং অন্য দিকে চলে যান। কিন্তু মামুনের কোন অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে না। প্রিয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, মামুন সেদিকেই চেয়ে আছে। প্রিয়া মামুনকে মেয়েটার দিকে ইশারা করে বলে...
--আপনার মেয়ে.......
--(এরপর মামুন মেয়েটার দিকে তাকায়)
--কোলে নিবেন না?
--(মামুন চুপচাপ বসে আছে)
--দেখুন আপনার আমানত, আপনার ভালোবাসার প্রতিদান।
--
--মেয়েটাকে একবার আদর করুন না....
--(মামুনের চোখ দিয়ে টুপ করে একফোটা পানি মেয়েটার গায়ে পড়লো)
--আপনি কাঁদছেন? কেনো? আজ তো খুশির দিন। কেনো কাঁদছেন আপনি?
মামুন মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা একদম প্রিয়ার মতো দেখতে। এটা যে খুশির কান্না, সেটা প্রিয়াকে কি করে বোঝাবে? বাবাদের সবচেয়ে বড় ভালোবাসা যে তাদের মেয়ে হয়। মেয়েরও সবচেয়ে বড় ভালোবাসা তার বাবা। মেয়েকে এতো কাছে পেয়ে ও মামুন পারছে না ওকে কোলে নিতে, আনন্দ করতে, একটু আদর করতে।
সেদিন প্রিয়ার হাত কেটে ফেলায়ও এতোটা কষ্ট পায় নি যাতটা আজ পাচ্ছে। তার হাত যে মেয়ের দিকে যাচ্ছে না। কোনো এক অজানা শক্তি বাঁধা দিচ্ছে। প্রিয়া মামুনের হাতটা ধরে মেয়েকে ছোয়ায়। মেয়েকে কোলে তুলে মেয়ের মুখটা মামুনের ঠোঁটে লাগিয়ে দেয়। মামুনের মনটা যেন হালকা হয় মামুন প্রিয়ার দিকে তাকায়, কিভাবে প্রিয়া সব বুঝে ফেলে?
এটাই বু্ঝি ভালোবাসা? মামুনের আজ খুব কষ্ট হচ্ছে, কেনো সে আজ দিনটা উপভোগ করতে পারছে না? ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে, তাহলেই হয়তো প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যাবে যে তাকে দিয়ে এসব করাচ্ছে।
এদিকে এলাকায় তান্ত্রিকও এসে যায়। বুঝতে পারে পুরো এলাকা ঝুড়ে কোনো এক শক্তি ক্ষমতা চালাচ্ছে...............
লেখক :- আবদুল্লাহ আল মামুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Give your opinion, please!