ভালোবাসার শক্তি

পর্ব:-৫


মামুন প্রিয়ার গলায় ধীরে ধীরে দাত বসাচ্ছে। ওমনি আয়েশা বেগম প্রিয়াকে টান দিয়ে বিছানা থেকে নামিয়ে নেয়। মামুন জোরে জোরে চিৎকার করছে। হাত পা বাঁধা থাকার কারনে ওদের ছুতে পারছে না। প্রিয়া ঘুম চোখে উঠে এসব দেখে ভয় পেয়ে যায়।

--তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? তোমাকে নিষেধ করেছিলাম ওর সাথে থেকো না। ও এখন আগের মামুন নেই।(আয়েশা বেগম)
--আমি কি করবো মা? ওনার এই অবস্থা যে আমার সহ্য হচ্ছে না।
--দেখো মা, ও এখন ভাইরাসে আক্রান্ত, তুমি ওর সাথে সেইফ নও। চলো আমার সাথে।
--না আমি যাবো না। আমি এখানেই থাকবো।
--বুঝার চেষ্টা করো। ও তোমার ক্ষতি করবে।
--আমি মরে গেলেও যাবো না, যতো দিন উনি সুস্থ না হন, আমি ওনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। আপনি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।
--তুমি একদম ওর কাছে যাবে না।
--ঠিক আছে, আপনি যান।
মামুন গর্জন করেই চলেছে। বাহির থেকে কাউকে ডাকবে, তারও কোন পায় নেই। কারন বাহিরেই আসল বিপদ।

--আপনি আমাকে মারতে চাচ্ছিলেন?
--
--আজ আপনার সান্তান যদি আমার পেটে না থাকতো। তাহলে আমি কোন বাঁধা দিতাম না।
--
--কিন্তু আমাকে যে বাচতে হবে, এই পরিবারের জন্য, আপনার জন্য, আপনার সন্তানের জন্য।
মামুনের দাতগুলো বড় হয়ে গেছে, ও প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো প্রিয়ার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
--আপনি যদি আমার কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করেন, তাহলে আমি কোন ছাড় দেবো না।
কথাটা যেনো মনে থাকে।

প্রিয়া একটু দুরে করে শুয়ে পড়ে। একটু পর প্রিয়া পাশ ফিরে মামুনের দিকে তাকায় এবং খুবই অবাক হয়। মামুন প্রিয়ার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে।

--কি হয়েছে?
--
--ঘুমান(বলেই প্রিয়া আবার অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে)
প্রিয়া বুঝতে পারে মামুন জোরে জোরে বিছানা নাড়াচ্ছে।
প্রিয়া আবার মামুনের দিকে ফিরলে মামুন বিছানা নাড়ানো বন্ধ করে দেয়।
--কি হচ্ছে?
--(মামুন চুপ করে তাকিয়ে আছে)
--ঘুমাতে দিবেন না?
--
--আর বিরক্ত করলে কিন্তু আপনার খবর আছে।
প্রিয়া আবার ওপাস হয়...
আবারও শুরু হয় মামুনের বিছানা নাড়ানো...
--কি শুরু করলেন আপনি? নিজেতো ঘুমাচ্ছেন না, আমাকেও ঘুমাতে দিচ্ছেন না!

প্রিয়া এবার ওপাশ ফিরলো না, মামুনের দিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে আছে। প্রিয়া চোখ বন্ধ করে ভাবছে। কি ব্যাপার? আর কোন সাড়া শব্দ নেই। হালকা চোখ মেলে দেখে মামুন ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তাহলে কি এতক্ষণ আমাকে দেখার জন্যই এমন বিরক্ত করছিলো? মা যে বললো উনি ওনার মধ্যে নেই। এটা এখন একটা হিংস্র পশু। তাহলে কেনো আমাকে দেখতে চাইছে? ওনার কি পরিবর্তন হচ্ছে?

সারা রাত আর কোন সমস্যা হয় নি। পরের দিন মামুন আবার স্বাভাবিক, শুধু কথা বলা ছাড়া।
--মা, উনি ৩দিন যাবত এভাবেই আছেন। ওনাকে তো গোসল করানো প্রয়োজন। (প্রিয়া)
--কিন্তু তালা খুলে দিলে যদি কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে?(আয়েশা বেগম)
--সে দায়িত্ব আমার, তালাটা খুলে দিন।
--না, ও আমাদের ক্ষতি করবে।
--আপনি এখানেই থাকুন, ভেতর থেকে লক করে দিন, বহিরটা আমি সামলে নেবো।
--কিন্তু তুমি?
--আমি এটা বুঝে গেছি যে উনি আমার কোন ক্ষতি করবে না। দিন চাবিটা....

প্রিয়া মামুনকে গোসল করাতে নিয়ে গেলো। ছোট বাচ্চাদের মায়েরা যেভাবে গোসল করায়, প্রিয়া মামুনকে তেমনি গোসল করিয়ে দিচ্ছে। মামুন অবুজ ছেলের মতো দাড়িয়ে আছে। মামুনকে গোসল করিয়ে খাইয়ে দাইয়ে আবার আগের মতো শিকল দিয়ে তালা বন্ধি করা হয়। মামুনকে কেবল প্রিয়াই কন্ট্রোল করতে পারে। মামুন যতই হিংস্র হয়ে ওঠে, প্রিয়ার এক ধমকে সব শান্ত হয়ে যায়। ছোট বাচ্চাদের পড়ানোর সময় মা যেমন হাতে একটা চিকন বেত রাখে, ঠিক সেই রকম একটা বেত প্রিয়ার হাতে থাকে।

কখনো ভুল করেও মামুনকে ওই বেত দিয়ে আঘাত করেনি। কিন্তু মামুন প্রিয়ার হাতে ওই বেত দেখলে একদম চুপ থাকে। ওই বেতটা সাথে রেখে প্রিয়া এখন মামুনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। এভাবে ৭-৮দিন পার হয়ে যায়। এখন প্রিয়া আর আয়েশা বেগম বুঝে গেছে কিভাবে মামুনের সাথে থাকতে হয়। মামুন মাঝে মাঝেই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। কেবল সেই সময়টা নিজেদের সুরক্ষা রাখতে হয়। কিন্তু মামুনের সুস্থ হওয়ার কোন ভালো দিক তারা দেখতে পাচ্ছে না।

এমনই একদিন সকালে প্রিয়া রান্না করছিলো, আয়েশা বেগমও ওর সাথেই ছিলো। হঠ্যাৎ দরজা ধাক্কানোর শব্দ। ঘরে কলিং বেল লাগানো আছে, তবু দরজা ধাক্কাচ্ছে, কে এটা? আয়েশা বেগম বিড়বিড় করতে করতে ধীরে পায়ে দরজার কাছে আসে। কারন মামুন বলেছিলো, যেই আসুক দরজা যেনো না খুলে। আয়েশা বেগম উকি দিয়ে দেখে এলাকার ৬-৭জন মুরুব্বি। আয়েশা বেগম ভয় পেয়ে যায়, এতো লোক হঠ্যাৎ আমার ঘরে? কোন পরামর্শ করতে এসেছে নাকি? ওরা কি জেনে গেছে আমার ঘরে ভাইরাস আছে। তাহলে তো ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলবে।

৭,৫ ভেবে দরজাটা হালকা খুলে।
--আপনারা এখানে কেনো?
(কেউ কেন জবাব দিচ্ছে না)
আয়েশা বেগম খেয়াল করে ওনাদের মধ্যে একজনের দাঁত বড় হচ্ছে, বুঝতে বাকি রইলো না এরা কারা....
আয়েশা বেগম দরজা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু অসফল হন।
সবাই ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকছে।
আয়েশা বেগম প্রিয়াকে নিয়ে দৌড়ে ওনার রুমে চলে যান, দরজা ভালো করে আটকে দেন।
--কি হয়েছে মা? এরা কারা?(প্রিয়া)
--এর সব পশু হয়ে গেছে।

দরজা জোরে জোরে ধাক্কাচ্ছে। শাশুড়ি বৌমা দুজন দুজনকে যাপটে ধরে আছে। পুরো ঘর যেনো তছনছ করে ফেলছে। যেনো বাহিরে বন্য পশুদের কোলাহল চলছে, শুধু গর্জনের শব্দ। আয়েশা বেগম মনে মনে ভাবছেন, আজই বোধয় আমাদের শেষ দিন।

--মা, ওনার রুম যে খোলা, ওরা ওনার ক্ষতি করে ফেলবে।
--ওর কিচ্চু করবে না, কারন সেও একই ভাইরাসে আক্রান্ত।
--না, যদি ওনার কোন ক্ষতি করে দেয়, আমাকে যেতেই হবে।
--তুমি পাগল হলে নাকি? এতগুলো লোক, তুমি একা কি করবে ওখানে?
--জানি না কি করবো, কিন্তু ওনাকে এভাবে একা ছাড়তে পারি না। আমাকে যেতেই হবে।

আয়েশা বেগম প্রিয়াকে শত চেষ্টা করেও আটকাতে পারলেন না। প্রিয়া দৌড়ে গিয়ে দরজার কাছেও চলে যায়, ততক্ষণে বাহিরের শব্দও কমে যায়। প্রিয়া দরজা খুলে বাহিরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আয়েশা বেগম দৌড়ে প্রিয়ার কাছে আসে। বাহিরে তাকিয়ে আয়েশা বেগমের চোখ যেনো মাথায় উঠে গেলো। সবগুলো লোক রক্তাক্ত হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। আর মামুন ঘরের এক কোনায় দাড়িয়ে আছে।

মামুনের হাতে পায়ে মুখে রক্ত লেগে আছে। ওদের আর বুঝতে বাকি রইলোনা যে মামুনই এদের মেরেছে। ওকেতো শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিলো। কিভাবে এমন হলো? এতোগুলো মানুষকে একাই মেরে ফেললো? মামুন নিশ্পাপ বাচ্চার মতো দাড়িয়ে আছে। সবাইকে মেরে ফেললো, এই যে নেশা.... রক্তের নেশা, খুনের নেশা। অনেকদিনের নেশা যে আজ পুশিয়ে নিয়েছে। ওর নিশ্পাপ চোখদুটো প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রিয়ার বিশ্বাস হচ্ছে না মামুন এসব করেছে। এরপর মামুন একে একে সবাইকে বাড়ির বাহিরে ফেলে আসে। প্রিয়ার হাতটা ধরে প্রিয়াকে বাথরুমে নিয়ে যায়। গিয়ে ঝর্নার নিচে দাড়িয়ে থাকে। প্রিয়া বুঝতে পারে। মামুনকে সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল করিয়ে দেয়। আয়েশা বেগম ঘর পরিষ্কার করছেন আর ভাবছেন, এটা সে কি দেখলো? নিজের ছেলে এতোগুলো খুন করলো, কিন্তু প্রিয়া আর ওনার কোন ক্ষতি করছে না। কেনো?

প্রিয়া মামুনকে রুমে নিয়ে আসে। বিছানায় বসে প্রিয়ার দিকে হাতদুটো এগিয়ে দেয়, যেনো শিকল লাগিয়ে দেয়। প্রিয়া শিকলের দিকে তাকিয়ে দেখে শিকল ছেড়া। প্রিয়ার মাথায় আসছে না মামুনের এতো শক্তি কোথায় থেকে এলো? যে শিকল ছিড়ে ফেললো...! প্রিয়া শিকলটা ছোট করে আবার লাগিয়ে দেয়। মামুন চুপচাপ বসে আছে। ওকে দেখে বোঝার উপায় নেই একটু আগে ৭টা খুন করেছে।

প্রিয়া শাশুড়ির কাছে আসে।
--আচ্ছা মা, উনি কি এখনো ভাইরাসে আক্রান্ত?(প্রিয়া)
--এসব দেখেও তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না?(আয়েশা বেগম)
--কিন্তু উনিতো আমাদের ওদের হাত থেকে বাচিয়েছেন।
--বাচায়নি, ওদের সামনে পেয়েছে, তাই খুন করেছে।
--আচ্ছা, তাহলে আমাকে আর আপনাকে কেনো খুন করেনি?
--আমি এটা জানি না ও কেনো আমাদের কিছু করেনি।
--মা, উনি কি সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন?
--যদি সুস্থই হতো, তাহলে ওর মুখে কেনো রক্ত ছিলো?
--তাহলে বলুন, উনি কেনো আমাকে বাথরুমে নিয়ে গেলেন গোসল করার জন্য?
--আমি বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে এসব?
--উনি আমাদের খুন করার সুযোগ পান নি ব্যাপারটা এমন নয়, উনি চাইলে আমাদের আরো আগেই খুন করতে পারতেন, কিন্তু করেন নি।
--কিভাবে বুঝলে?
--উনি শিকল ছিড়ে ফেলেছেন, যার পক্ষে শিকল ছেড়া কোন ব্যাপারই না, সে কেনো এতোদিন যাবত শিকলে বন্ধি আছে? ব্যাপারটা একটু ভাবুন।
--হুম তাইতো,,,
--মা, আমার মনে হচ্ছে আমাদের চোখের আড়ালে কিছু একটা হচ্ছে.............

লেখক :- আবদুল্লাহ আল মামুন

Post a Comment

Give your opinion, please!

নবীনতর পূর্বতন