ভালোবাসার শক্তি
পর্ব:-৭ সমাপ্তি পর্ব (সিজন-২)
প্রিয়াকে দুজন ধরে রেখেছে। প্রিয়া খুব বিনয়ী ভাবে কেঁদে কেঁদে বলছে ওদের ছেড়ে দিতে। কিন্তু কবিরাজের মনে কোনো দয়া হচ্ছেনা। কবিরাজ অনিমাকে নিয়ে আসনে বসে পড়ে। অনিমা চেয়েও কিছু করতে পারছে না। কারনটা পরিবারকে বাচানোর ভয়। সে কিছু করতে গেলেই যে কবিরাজ কারো ক্ষতি করে ফেলবে। কবিরাজ অনিমাকে নিশ্চিন্তে বসতে বললো।
--তোমাকে আমি কোনো জোর করবো না, তুমি স্বইচ্ছায় তোমার শক্তি আমাকে দান করবে।
যদি বাড়তি কোনো কিছু করার চেষ্টা করো, তাহলে তোমার পুরো পরিবারকে আমি ধ্বংস করে দেবো।
--না না, ওনাদের কিছু করবেন না। আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো।
--আমি যা পড়বো, আমার সাথে সাথে তা পড়বে।
--ঠিক আছে।
অনিমা কবিরাজের সাথে সাথে মন্ত্র পড়ছে। কবিরাজ মন্ত্র পড়ে অনিমার ওপর কিছু একটা ছিটিয়ে দেয়। অনিমা সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে। প্রিয়া চিৎকার করে কবিরাজকে অনুরোধ করছে, আমার মেয়ের কিছু করো না,প্লিজ..। কবিরাজ যেনো কিছুই শুনছে না। অনিমার হাত একটা কাচের পাত্রের ওপর রাখলো এবং একটা ধারালো ছুরি নিলো। কবিরাজের হাতে ছুরি দেখে প্রিয়া অঝোরে কাঁদতে থাকে। নিজের মেয়েকে কি আজ চোখের সামনে খুন হতে দেখবে?
প্রিয়ার প্রচন্ড রাগ হতে থাকে, ইচ্ছে করছে কবিরাজকে নিজের হাতে খুন করে ফেলতে। ছুরিটা একটা বৃত্তের মাঝখানে রেখে কবিরাজ আবার মন্ত্র পড়া শুরু করলো। প্রিয়া স্পষ্ট খেয়াল করলো ছুরিটা কেমন যেনো ঝিকমিক করছে। কবিরাজ ছুরিটা হাতে নিয়ে মন্ত্র পড়তে পড়তে অনিমার গলার কাছে ছুরি নিয়ে আসে। প্রিয়ারও চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়।
কবিরাজ প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে প্রিয়া নেই। যেই দুজন প্রিয়াকে ধরে রেখেছিলো তারাও নেই ঘরের বাহির থেকে চিৎকারের আওয়াজ শুনে কবিরাজ বাহিরে ছুটে যায়। প্রিয়াকে যে দুজন ধরে রেখেছিলো তারা মরে পড়ে আছে। কবিরাজ আরো জোরে জোরে মন্ত্র পড়তে থাকে। মনে হচ্ছে যেনো ঘরের মধ্যে কোলাহল শুরু হয়েছে। কবিরাজ দৌড়ে আবার ঘরে আসে।
প্রিয়া ঘরের এক কোনায় দাড়িয়ে আছে। বাকি সব কিছু আগের মতোই আছে। কবিরাজ প্রিয়ার তাকিয়ে থাকা দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। এই মেয়ের মধ্যে এমন কি আছে যে ২জন পুরুষকে মেরে ফেলেছে। তার তাকিয়ে থাকাটাও ভীষণ ভয়ংকর দেখাচ্ছে। কবিরাজ তাড়াতাড়ি করে অনিমার গলায় ছুরি বসাতে যায়। কিন্তু ছুরি গলার কাছে এসে আটকে যায়। কবিরাজ এদিক সেদিক একটুও নড়তে পারছে না।
কবিরাজ অনিমার শক্তির পেছনে এতোটাই পাগল ছিলো, এই শক্তির উৎস কি সেটাই জানতো না।
প্রিয়ার মধ্যে যে মায়া শক্তি আছে সে এটাই জানতো না। কবিরাজ এখন প্রিয়ার মায়া শক্তিতে আটকে পড়েছে। যোযো ছাড়া এখন কবিরাজকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। কবিরাজের সব কর্মী ধীরে ধীরে প্যারালাইজড হয়ে যায়। কেউ কিছু করতে পারছে না। হুস থাকলেও কেউ আর শরীর ব্যবহার করতে পারছে না। প্রিয়া মামুন, অয়ন এবং আদির বাঁধন খুলে দেয়। কিন্তু ওরা এখনো অজ্ঞান। প্রিয়া কবিরাজের দিকে এগিয়ে আসে। কবিরাজ প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
--এতো অনুরোধ করলাম, আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও। একবারও শুনলে না। এখন তোমাকে কে বাঁচাবে?
--........
--যদি তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারে? তাহলে বাঁচিয়ে নিক। কেননা আমি তোমাকে কোনো ভাবেই ছেড়ে দেবো না। এক স্বামীর জন্য আমি অনেক লড়েছি, আর তুমি পুরো পরিবারটাকে নিয়ে এসেছো। তোমাকে ছেড়ে দেবো?
--.........
--কোথায় তোমার সেই যোযো? ডাকো তাকে.......
কবিরাজ যেনো এখন পুরো অসহায়। কিভাবে সে এখন নিজেকে বাঁচাবে? প্রিয়া কবিরাজের হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে নেয় এবং চিৎকার করে কবিরাজের বুকের মাঝখানে বসাচ্ছিলো। সাথে সাথে কে যেনো পেছন থেকে প্রিয়ার মাথায় আঘাত করে। প্রিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, কবিরাজ প্রিয়ার মায়া জ্বাল থেকে মুক্তি পেয়ে যায়। কবিরাজের মুখে আবার সেই শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে। এখন কে বাচাবে অনিমাকে? কে বাচাবে পরিবারটাকে?
.
.
.
.
.
.
প্রিয়া চোখ খুলে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে। পাশেই মামুন ঘুমিয়ে আছে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে মাত্র ভোর হচ্ছে। হঠ্যাৎ অনিমা, অয়ন আর আদির কথা মনে পড়ে। প্রিয়া দৌড়ে ছেলের রুমে যায়। অয়ন ঘুমাচ্ছে, যেনো কলিজায় পানি আসে। অনিমার রুমে গিয়ে দেখে দরজা লাগানো। দরজায় টোকা দিলে অনিমা দরজা খুলে দেয়। প্রিয়া মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। অনিমাও কেঁদে দেয়।
--তুই কাঁদছিস কেনো?(প্রিয়া)
--আমি খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি মা....
--কি স্বপ্ন?
--(অনিমা পুরোটা মাকে বলে)
--এর পর কি হয়েছিলো?
--এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। চোখ খুলে ওনাকে আর তোমাকে দেখে বুঝতে পারলাম এটা স্বপ্ন ছিলো।
প্রিয়া উকি দিয়ে দেখলো আদি ঘুমাচ্ছে।
--চিন্তা করিস না? সব ঠিক আছে। যা, রুমে যা।
প্রিয়া একটা গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে যায়। কি হচ্ছে এসব? তাহলে কি এটা আসলেই স্বপ্ন? যদি স্বপ্ন হয়ে থাকে, তাহলে মা মেয়ে দুজন কি একই স্বপ্ন দেখলো? কিন্তু কিভাবে? এই স্বপ্ন যেনো স্বপ্নই থাকে। প্রিয়া সব মাথা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সংসারের কাজে লেগে পড়ে। মামুনকেও জিজ্ঞেস করেছিলো এমন কোনো স্বপ্ন দেখেছে কিনা?
মামুন বললো সে এমন কোনো স্বপ্ন দেখে নি। প্রতিদিনের মতো স্বাভাবিক ভাবেই তার ঘুম ভেঙেছে।
বিকেলে প্রিয়া হঠ্যাৎ কি মনে করে যেনো মামুনের ফোনটা হাতে নেয়। স্বপ্নে তো কবিরাজের সাথে ফোনে কথা বলেছিলো, যদি স্বপ্ন হয়ে থাকে তাহলে ফোনে কোনো প্রমান থাকবে না। এমনিতেই মামুনের ফোনে অটো কল রেকর্ডিং সেট করা। প্রিয়া কল লিস্ট চেক করে দেখে লিস্টে কবিরাজের নাম্বার আছে। যা থাকাটাও স্বাভাবিক। কেননা কবিরাজ আদির এক্সিডেন্টের পর মামুনকে কল করে হুমকি দিয়েছিলো।
প্রিয়া আনমনেই কল রেকর্ড চেক করতে থাকে। তখনই মামুন ওর পাশে এসে বসে।
--আমার ফোনে কি করছো?(মামুন)
--কল রেকর্ডিং চেক করছি।
--তুমি আমাকে এই বয়সেও সন্দেহ করছো?
--সন্দেহ করবো কেনো?
--তাহলে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছি কিনা তা চেক করছো কেনো? তোমার কি মনে হয় এই বয়সে আমার সাথে কেউ প্রেম করবে?
--আপনি আস্ত একটা গাধা, চুপ করে বসুন।
ওমনি সাথে সাথে প্রিয়া আর কবিরাজের কল রেকর্ডিংটা বেজে ওঠে।
মামুন অবাক চোখে প্রিয়ার দিকে চেয়ে আছে।
প্রিয়াও যেনো আকাশ থেকে পড়লো।
--আমার ফোন দিয়ে তুমি কখন ওর সাথে কথা বলেছো?(মামুন)
প্রিয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে।
--কি হলো?
--আমি আপনাকে বললাম না সকালে একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছি..
--হুম
--সেটা স্বপ্ন নয়, বাস্তব ছিলো।
--মানে?
--আমি বুঝতে পারছি না এসব কি হচ্ছে..... কারন কবিরাজ আমাকে আর আনিমাকে এভাবেই ফোন করে ডেকেছিলো
প্রিয়া যেনো একটা বড় ধাক্কা খায়। কেননা কেবল প্রিয়া আর অনিমা এই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। বাকিরা সবাই অজ্ঞান ছিলো। যদি এই ঘটনাটা স্বপ্ন হয়ে থাকে? তাহলে কল রেকর্ডিং কিভাবে ফোনে আছে? আর যদি ঘটনাটা বাস্তব হয়ে থাকে, তাহলে ওখান থেকে বাঁচালো কে? বাঁচিয়ে আবার ঘরেও দিয়ে গেলো...?????
ওখান থেকে অনিমা ছাড়া বাঁচাবার মতো আর কেউ ছিলো না। কিন্তু অনিমাও তো অজ্ঞান হয়ে ছিলো। এছাড়া যোযো নামে যে কেউ একজন আছে, সে ই বা কোথায়? প্রিয়ার মাথা ভোঁ ভৌঁ করে ঘুরতে থাকে। মামুন প্রিয়াকে সান্তনা দিতে থাকে, যেনো এটা স্বপ্ন ভেবে ভুলে যায়। কেননা যেটাই হয়েছে, খারাপ হয়নি। অনিমা যদিও না বাচায়, অন্য কোনো শক্তি বাচিয়েছে। অনিমা সব ওখানেই ভুলে যায়। সবাইকে ফিরে পেয়েছে এটাই অনেক।
আদিও প্রায় সুস্থ। অনিমার সেবায় খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে যাচ্ছে। এই ঘটনার ৩ দিন পর এক মাঝরাতে আদির ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে দেখে অনিমা এক দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকিয়ে আছে।
--তুমি এখনো ঘুমাও নি?
--ঘুম আসছে না।
--তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে?
--আপনার সমস্যা কি?
--ঘুমিয়ে থাকা কারো ওপর একদৃষ্টিতে কেউ তাকিয়ে থাকলে তার ঘুম ভেঙে যায়।
--কই? আর কোনো দিন তো ভাঙে নি...
--তারমানে তুমি এরকম আরো করতে?
--হুম
--কেনো?
--আপনাকে ভালোবাসি তাই।
--কিন্তু আমিতো বাসি না।
--আপনি কি জানেন আমার মধ্যে একটা ক্ষমতা আছে....?
--হুম, তুমি মনে মনে কিছু বললে সেটা হয়ে যায়।
--হুম, আমি একটু আগে মনে মনে আপনাকে নিয়ে কিছু একটা বলেছি।
--কি বলেছো?
--বলবো না, দেখি হয় কিনা।
--যদি হয়ে যায়?
--হলে তো খুব খুশি হবো।
--যদি হওয়ার পর তোমার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়?
--কোনো আফসোস থাকবে না, কারন এই ক্ষমতা আমি চাই না।
--কেনো?
--কারন আমার বাবা, মা, ভাই, স্বামী সব আছে। শুধু আর একটা জিনিস বাকি আছে, সেটা হলেই আমি পূর্ন। এই ক্ষমতা আমি শেষ করে দিতে চাই।
--তাহলে হয়েই যাক...........
চারদিকে হঠ্যাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। আকাশের মেঘগুলো ছোট ছোট করে গর্জন করছে, কারন এটা যে দুজনের বৃষ্টি ঝরে পড়া একটি রাতের কিছু অপ্রাপ্তির মুহূর্ত। ব্যর্থতায় নিমজ্জিত আর বিদ্ধস্ত নেশার্ত দুটি অক্ষির সম্মুখে অজস্র বৃষ্টি ঝরে পরা একটি রাত। এই ঝুম বৃষ্টি যে কাছাকাছি থেকেও দীর্ঘ সাড়ে ৩মাসের অপেক্ষাকে বরন করে নিচ্ছে। এই রাত যে কিছু প্রাপ্তি আর প্রত্যাশা জন্য।
আজ অনিমার একটা ছেলে হয়েছে। একইসাথে আজ তাদের বিবাহবার্ষিকী। মামুন আর প্রিয়া এসেছে নাতিকে দেখতে। সবাই খুব খুশি। এর মধ্যে আর কখনো কারো কোনো সমস্যা হয় নি। অনিমার কাছে এখন আর কোনো ক্ষমতা নেই। সবাই এই ব্যাপারটা ভুলেও গেছে। আদি সবার সামনেই বলে উঠলো।
--আমার খরচ বেচে গেছে, আলাদা করে বিবাহবার্ষিকীর জন্য খরচ করা লাগবে না। (আদি)
সবাই একসাথে হেসে ওঠে।
--আজ আপনাদের কিছু কথা বলতে চাই। যা আপনাদের থেকে আমি লুকিয়ে গেছি।(আদি)
--কি কথা?(মামুন)
--এমন একটা কথা, যেটা শুনলে আপনারা সবাই অবাক হয়ে যাবেন। এই কথা আমি কখনো অনিমাকেও বলিনি।
--আমাকেও বলেন নি? কি এমন কথা?(অনিমা)
--আপনারা কি আমার আসল পরিচয় জানেন?
মামুন একটু অবাক হলো,
--আসল পরিচয় মানে? তুমিতো বলে্ছিলে তোমার বাবা মা নেই, এবং কোনো আত্মিয় স্বজন ও নেই। আর কিসের পরিচয়?
--আপনারা যোযোর নাম শুনেছিলেন?
মামুন এবার পুরোপুরি অবাক হলো, এই নামটা অনেকদিন পর শুনতে পেলো।
--হুম শুনেছি।
--আমিই সেই যোযো........
সবাই যেনো আকাশ থেকে পড়লো..
--কি বলছেন আপনি এসব? (অনিমা)
--আমি সত্যিই বলছি। আমিই যোযো, আপনাদের অনেক ক্ষতি করেছি আমি। এবং সব ছিলো আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
--মানে?
--আমিও আপনাদের মতো একজন সাধারন মানুষ। কিন্তু অনিমার মতো আমারো একইরকম ক্ষমতা ছিলো। ছোটবেলায় খুবই দুষ্টু ছিলাম, এই দুষ্টুমির জন্য একদিন বাবা মা খুব মেরেছিলো। রাগে মা বাবাকে যা নয় তা বলে ফেলেছিলাম এবং নিজের অজানতেই বাবা মাকে আমার জন্য প্রান দিতে হয়। আমি নিজেও জানতাম না আমার মধ্যে কোনো রকম ক্ষমতা আছে। একবার ওই কবিরাজ আমাকে কোথায় যেনো দেখে, কাজের অফার দিয়ে আমাকে ওর কাছে ডাকে। ওর উদ্দেশ্য ছিলো আমার থেকে ক্ষমতা নিয়ে নিবে। কিন্তু জোর করে নেওয়া ওর পক্ষে সম্ভব ছিলো না, অনিমার মতো আমার কোনো পরিবার নেই যে ও আমাকে বাধ্য করবে। একটা ডায়েরিতে কিছু লিখে আমাকে মনে মনে পড়তে বলতো। মনে মনে পড়লে তা বাস্তবে হয়ে যেতো। এভাবে নিজের কাছে রেখে আমাকে ব্যবহার করা শুরু করে, এর মধ্যে ও একদিন অনিমাকে দেখতে পায়।আপনাকে সব বলে দেওয়ায় ওই তান্ত্রিককে ডায়েরি পড়ে আমিই মেরেছিলাম, আপনাদের পরিবারের ওপর সব অত্যাচার আমিই করেছিলাম। সব ছিলো আমাদের পরিকল্পনা মতো। সত্যি বলতে আমার কোনো দয়া মায়া হয় নি। কবিরাজের মন্ত্রের ফাদে পড়ে আপনারা আমাকেই অনিমার জন্য পছন্দ করেছিলেন। বিয়ের দিন অনিমাকে শাড়ি পড়ানোর ফাকে ওকে কবিরাজের মন্ত্র পড়ানো একটা আংটি পড়িয়ে দিয়েছিলাম। যার জন্য আমি কাছে থাকার শর্তেও অনিমা আমার ক্ষমতা টের পায়নি। এছাড়া আমার এক্সিডেন্ট, আমার ওপর কবিরাজের আঘাত করা সবই ছিলো আমার অভিনয়। আপনাদের ওপর এতো অত্যাচার করতাম, তবুও কখনো আমার খারাপ লাগেনি। শেষদিনের কথা তো সবাই জানেন, যেটুকু জানেন না, সেটুকু বলছি। মা, আপনার কি মনে আছে আপনার মাথায় আঘাত করা হয়েছিলো?
--হুম(প্রিয়া)
--আমিই আপনার মাথায় আঘাত করেছিলাম। সেদিন খুব খারাপ লেগেছিলো
--এরপর কি হয়েছিলো?
--তান্ত্রিক আমার চোখের সামনে অনিমাকে জবাই করতে চাচ্ছিলো। সেটা আমি দেখতে পারি নি। ওকে অনুরোধ করেছিলাম যেনো এসব না করে। কিন্তু তার নাকি অনিমার ক্ষমতা লাগবেই, এই জন্য তাকে মেরে ফেলতে হবে। কোনো উপায় না পেয়ে সেই ছুরিটা দিয়ে আমিই ওকে মেরে ফেলি।
--কেনো করেছিলে এসব? তুমিতো তারই লোক ছিলে। আমাদের ক্ষতি হলে তোমার কি যায় আসতো?(মামুন)
--জানি না, এটা নিয়ে পরে আমি অনেক ভেবেছি, কিন্তু কোনো উত্তর পাই নি।
--এখনো তোমার আর অনিমার এই ক্ষমতা আছে?
--না। আপনার মনে আছে? তান্ত্রিক আপনাকে বলেছিলো বিয়ের পর অনিমার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে..!
--হুম, কিন্তু তখন তো হয় নি।
--কারন প্রায় ৩ মাস অনিমাকে আমি স্পর্শও করি নি।
--হুম বুঝেছি..... এতে তো তোমার ক্ষমতাও চলে গেছে..
--হুমম..
--কেনো এই শক্তি নষ্ট করলে? তুমিতো চাইলে অনিমাকে মেরে ওর থেকেও শক্তি নিতে পারতে।
--আপনাদের ভালোবাসার শক্তির মাঝে এই শক্তি কিছুই না। অনিমা আমাকে পুরো বদলে দিয়েছে, আর বাবা মা হারিয়েও আমার মনে হচ্ছে আমি আবার বাবা মা ফিরে পেয়েছি। কিভাবে আমি এই পরিবারের ক্ষতি করতাম?
মামুন আর কি বলবে? কথা বলার যে আর কোনো ভাষা নেই। সবাই স্তব্ধ, এই পরিবারের ওপর তাহলে আর কারো নজর নেই। আদি সত্যিই একটা কথা বলেছে। ভালোবাসার শক্তির কাছে বড় কোনো শক্তি নেই।
লেখক :- আবদুল্লাহ আল মামুন
লেখক :- আবদুল্লাহ আল মামুন
{লেখক:: সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার বাহিরে একটা গল্প লিখেছি। জানিনা গল্পটা কেমন হয়েছে,, গল্পটা রোমান্টিক করিনি, কারন মামুন আর প্রিয়া চরিত্রে(#ভালোবাসার_শক্তি) কিছুটা রোমান্টিক সম্পর্ক ছিলো, তাই একিসাথে তাদের মেয়ের চরিত্রেও রোমান্টিকতা সম্পূর্ণ কুরুচিপূর্ণ মনে হলো। এছাড়া আর কোনো মন্তব্য থাকলে কমেন্টে জানাবেন, ধন্যবাদ!!}
সমাপ্ত
সমাপ্ত
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Give your opinion, please!