ভালোবাসার শক্তি

পর্ব:-৬ (সিজন-২)



তান্ত্রিক বলেছিলো অনিমার শত্রু কেবল যোযো, কবিরাজ শুধু মাধ্যম... কবিরাজই জানে এই যোযোর ব্যাপারে। কে এই যোযো? দেখতে কেমন? কিছুই জানিনা। আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি হওয়ার আগে এই যোযোকে খুজে বের করতেই হবে। মামুন কবিরাজকে তন্নতন্ন করে খোজে, কিন্তু কোথাও পায় না। এক সন্ধ্যায় মামুনের ফোনে একটা ফোন আসে।


আদি কাজ থেকে ফেরার পথে রাস্তায় এক্সিডেন্ট করেছে। কাউকে কিছু না জানিয়ে মামুন তড়িঘড়ি করে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। গিয়ে দেখে সত্যিই আদি এক্সিডেন্ট করেছে। হাত পায়ে ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় একটা বেডে শুয়ে আছে। তখন ফোনে আবার ফোন আসে..

--হ্যালো...
--এবারের মতো তোমার জামাইকে ছেড়ে দিলাম, যদি আমার কথায় রাজি না হও, তাহলে একে একে সবাইকে মেরে ফেলবো। আমার কিচ্ছু করতে পারবে না।
--কেনো এমন করছো তুমি? কি অপরাধ করেছি আমরা?
--তোমরা কিছুই করোনি, শুধু তোমার মেয়েটাকে আমায় দিয়ে দাও। বাকি কারো কোনো ক্ষতি করবো না।
--না, আমি বেচে থাকতে তুমি তা কখনোই পারবে না।
--তবে আর কি? তুমিই মরার জন্য তৈরী হয়ে যাও।
--পারলে আমার সামনে আসো,
--আসবো আসবো, তোমার মৃত্যু হাতে নিয়েই আসবো। তোমার পুরো পরিবার শেষ করে দিবো। মনে রেখো।

কবিরাজ ফোনটা কেটে দেয়। মামুন খুবই চিন্তায় পড়ে যায়। আদিকে কোনো রকমে বাড়িতে নিয়ে আসে। প্রিয়া আর অনিমা খুব কান্নাকাটি করছে। মামুন, প্রিয়া, অনিমা সবাই আদির পাশে বসে আছে মামুনের ফোনে আবার কল আসে।

--হ্যালো
--তোমাকে শেষ বারের মতো বলছি, আমার কথায় রাজি হয়ে যাও।
--তোমার সাহস থাকলে এসে নিয়ে যাও।
--এতো সাহস দেখাতে পারবো না, তোমার মেয়েকে রাজি করাও। এতে বাকি সবার মঙ্গল।
--বুঝতেই যখন পারছো তুমি নিতে পারবে না, তাহলে কেনো শুধু শুধু হয়রানি করছো? নিজে ভালো থাকো, আমাদের ও ভালো থাকতে দাও।
--তাহলে আমার কথা শুনবে না? ঠিক আছে, প্রস্তুত হয়ে যাও।
--প্রস্তুত আছি। আসো.......
কবিরাজ আবার ফোনটা কেটে দেয়।
--কে? (প্রিয়া)
--কবিরাজ
--কি বলে?
--সেই একি কথা বার বার বলে।
--পাপা... কবিরাজ যা বলছে মেনে নাও। আমি কবিরাজের কাছে যাবো।(অনিমা)
--কি বলছিস তুই? পাগল হয়ে গেলি নাকি?(প্রিয়া)
--না মা, পাগল হইনি। আমার জন্যই এতো সমস্যা, আমি জানি আমার জন্যই আজ ওনার এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি চাই না আমার জন্য কারো কোনো ক্ষতি হোক।
--আমাদের যতো ক্ষতিই হোক, আমরা তোর কোনো ক্ষতি হতে দিবো না। তাছাড়া কবিরাজ তোর ক্ষতি করাতো দুরের কথা, তোকে ছুতেও পারবে না। তার এতো ক্ষমতা নেই।
--তাহলে সে এসব কিভাবে করছে?
--যোযোর মাধ্যমে, যোযোই তোর প্রধান শত্রু, কবিরাজের এতো শক্তি নেই যে সে তোকে মারবে।
--যোযো কে মা?
--জানি না কে এই যোযো। তুই চিন্তা করিস না মা, কিচ্ছু হবে না তোর।
--কিন্তু মা.....

--কোনো কিন্তু না, জামাইর খেয়াল রাখ। আমরা আসি।
অনিমা বসে বসে চোখের পানি ফেলছে।
--আনিমা.... তুমি কাঁদছো কেনো?(আদি)
--আজ আমার জন্যই আপনার এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো। আমি না থাকলে হয়তো এমন হতো না। সব আমার দোষ...
--তোমার দোষ হবে কেনো? এটা তো নিয়তি।
--যদি আজ আপনার কিছু হয়ে যেতো.....?
--তাহলে আরেকটা বিয়ে করে নিবে....
অনিমার দুঃখি মনটা রাগে পরিনত হলো।
--কি বললেন?
--আমি মরে গেলে সমস্যা কি? ছেলের কি অভাব হবে?
অনিমা আদির মুখটা চেপে ধরে...
--বেশি কথা বলা শিখে গেছেন। আগের মতো একদম চুপ থাকবেন।
--চুপ না থাকলে কি করবে?
--দেখবেন কি করবো?
--হুম...
অনিমা আদির ব্যান্ডেজে হালকা একটু চাপ দেয়।
--ওমাগো.....
--আর বলবেন?
--না না, আর বলবো না।
--হুম, লক্ষি ছেলের মতো এবার ঘুমান।
--খাবো না? ক্ষুদা লেগেছে তো।
--খেয়ে লাভ নেই, চুপ চাপ ঘুমান।
--আমার জন্য কি তোমার মনে একটুও দয়া মায়া নেই?
--না
বলেই অনিমা রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

একটা প্লেটে ভাত বেড়ে আদির জন্য নিয়ে আসে। অনিমা পুরো অবাক, ছেলেটা সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে গেছে। অনিমা আদির পাশে গিয়ে বসে।
--শুনছেন?(আলতো করে ছুয়ে)
--হুম....
--ঘুমাননি?
--ঘুমাচ্ছি...
--খাবেন না?
--না
--ভাত নিয়ে এসেছি।
--তুমি খেয়ে শুয়ে পড়ো, আমি খাবো না।
--রাগ করেছেন?
--হুম
--উঠবেন? নাকি আবার ব্যান্ডেজ ধরবো?
--না না, উঠছি।
--হুম এবার খান...
--একটা চামচ আনলে না?
--চামচ কেনো?
--আমার হাতে ব্যান্ডেজ, খাবো কি করে?
--আমি আছি কি জন্য?
--ব্যান্ডেজ টিপার জন্য....
--আবারো বেশি কথা বলে.... নিন, হা করুন।

অনিমা আদিকে খাইয়ে দিচ্ছে। আদি এক দৃষ্টিতে অনিমার দিকে চেয়ে আছে। এখনো মেয়েটার চোখ পানিতে ছলছল করছে। খাওয়া শেষে আদি শুয়ে আছে। অনিমা সব কাজ শেষ করে শুতে আসে।

--একি? এখনো ঘুমাননি?
--ঘুম আসছে না..
--আমি ঘুম পাড়িয়ে দেই?
--দাও...
আদি অনিমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, আর অনিমা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
--অনিমা... তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
ভালোবাসার কথা শুনে অনিমা লজ্জা পায়, কেননা এই ১ম আদি ওকে ভালোবাসার কথা বললো।
--(মুচকি হেসে হালকা হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো)
--কিন্তু আমিতো তোমাকে ভালোবাসি না।
অনিমার হাসি মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেলো....
--তাতে কি হয়েছে? আমিতো বাসি।
--তুমিতো আমাকে পছন্দ করতে না...! কিভাবে ভালোবাসলে?
--জানি না,
--ভালো, আমার ঘুম আসছে।

অনিমা আর কিচ্ছু বললো না। মনে মনে ভাবছে, সত্যিই তো সে আদিকে অপছন্দ করতো। তাহলে কিভাবে তার এতো মায়া জন্মালো? কেনো সে আদিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো? আদি কি সত্যিই তাকে ভালোবাসে না? আদির কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে সে নিজেই জানে না।

সকালে খুব স্বাভাবিক ভাবেই অনিমার ঘুম ভাঙে। দরজা ভেতর থেকেই লাগানো, কিন্তু আদি রুমে নেই। অনিমার বুকটায় কেমন চিনচিন ব্যথা অনুভব হয়। আবারো কি সে আদিকে হারাতে বসেছে রুম থেকে বের হয়ে মায়ের রুমে আসে দরজা টোকা দিলে প্রিয়া এসে দরজা খুলে,

--মা.... উনি রুমে নেই।
প্রিয়া পেছন ফিরে নিজের বিছানায় তাকিয়ে দেখে মামুন ও রুমে নেই। দৌড়ে অয়নের রুমে যায়। অয়নও রুমে নেই।
--মা.. কি হচ্ছে এসব?
প্রিয়া বোবার মতো ফ্লোরে বসে পড়ে।
--মা... কি হয়েছে তোমার?

ঘরে কেবল দুজন মহিলা... কিভাবে খুজবে ওদের? বিছানায় মামুনের ফোনটা বাজতেছে। প্রিয়া ফোনটা উঠায়।
--কি? তোমার স্বামী, সন্তান আর জামাইকে খুজছো? ওরা আমার কাছে।
--কে তুমি?
--কবিরাজ.........
--কেনো নিয়ে গেছো ওদের?
--ওদের ফিরে পেতে চাও?
--হ্যা হ্যা, ওদের ফিরিয়ে দাও প্লিজ।
--এর জন্য তোমার মেয়েকে লাগবে। ওকে আমার হাতে তুলে দাও।
--কিছুতেই না।
--তাহলে তোমার স্বামী সন্তান সবাই মরবে। ১জনকে বাঁচাতে গিয়ে ৩জনকে হারাবে। এখনো সময় আছে, ভেবে নাও। তোমাকে আমার ঠিকানা পাঠাচ্ছি, ২ ঘন্টার মধ্যে মেয়েকে নিয়ে আসো, তা না হলে ১০ মিনিট পর পর সবাইকে মেরে ফেলবো।

কবিরাজ ফোনটা কেটে দেয়। প্রিয়ার মাথা ভনভন করছে.. এখন সে কি করবে? মেয়েকে বাঁচাবে? নাকি বাকি পারিবারটা?
--অনিমা... তোকে এতোদিন বলেছি কখনো কাউকে নিয়ে খারাপ কিছু বলবি না। আজ বলছি, তোর পরিবারকে যে নিয়ে গেছে, তার থেকে আবার পরিবারটা ফিরিয়ে আন।

অনিমা বুঝতে পারে ব্যাপারটা কি। অনিমার কলিজার টুকরা ভাই, বাবা আর স্বামী.. কাউকেই সে হারাতে পারবে না। অনিমা চিৎকার করে কবিরাজে ধ্বংস প্রার্থনা করে। এতে ঘরের আসে পাশে তুফান শুরু হয়, এমন মনে হয় যেনো তারা কাচের দেয়ালের মধ্যে বন্ধি। কোনো ভাবেই কোনো কাজ হচ্ছে না।

--মা, চলো, যা হওয়ার হবে। কবিরাজ একা আমাদের সাথে পারবে না। আমরা সবাইকে নিয়ে আসি।
--যদি ওখানে যোযো থাকে তাহলে? দাড়া, পুলিশকে ফোন দেই।
সাথে সাথে আবার কবিরাজের কল আসে।
--হ্যালো....
--পুলিশকে কিছু জানালে এখনই সবাইকে মেরে ফেলবো, তোমরা কি করছো না করছো সব আমি দেখতে পারছি। তোমাদের চারপাশে আমার প্রসিদ্ধ জিন বাহিনী আছে। সোজা এখানে চলে এসো।

প্রিয়ার আজ নিজেকে কেমন ব্যর্থ মনে হচ্ছে। সে কি স্বামী সন্তানদের বাঁচাতে পারবে না? কোনো উপায় না পেয়ে মা মেয়ে দুজনই পরিবারটা বাঁচাতে ছুটে যায়। কবিরাজের দেওয়া ঠিকানায় পৌছে যায়, কবিরাজের কিছু লোক প্রিয়া আর অনিমাকে কবিরাজের আস্তানায় নিয়ে আসে। কবিরাজ কয়েকটা মাথার খুলি, হাড়, কিছু তাবিজ এবং একটা বই নিয়ে বসে আছে।

--বসো এখানে(কবিরাজের সামনে বসতে বলে)
--আমার স্বামী, সন্তান আর জামাই কোথায়?
--আছে, সবাই আছে। এতো চিন্তা করো না। বসো
--আগে ওদের সামনে আনো।
--ওদের সামনে নিয়ে আয়।(লোকগুলোকে বলে)

মামুন, অয়ন আর আদিকে সামনে নিয়ে আসা হলো। কিন্তু ওদের চোখ ও হাত বাধা। অনিমা পাপা বলে দৌড়ে মামুনের কাছে যাচ্ছিলো, একজন অনিমাকে বাধা দেয়। অনিমার এক ধাক্কায় লোকটা দেয়ালে বাড়ি খেয়ে ওখানেই অজ্ঞান। কবিরাজ একটা পুতুলে একটা সুই দিয়ে গুতো দেয়। অমনি মামুন চিৎকার করে ওঠে। অনিমা সাথে সাথে দাড়িয়ে যায়।

--আর এক পা সামনে আগালে অবস্থা আরো খারাপ হবে।(কবিরাজ)

অনিমা খেয়াল করে বাবা, ভাই, আদি কারো হুস নেই, সবাই অজ্ঞান। আদির সারা শরীরে ব্যান্ডেজ, এই অবস্থায় ওকে বেধে রেখেছে। অনিমার চোখ দিয়ে আনমনেই পানি পড়ছে। কোনো উপায় না পেয়ে পিছে ফিরে এলো। সবাই যেনো ভুলেই গেছে যোযো বা কবিরাজের চেয়েও অনিমার ক্ষমতা বেশি। কিন্তু অনিমা তা ব্যবহার করতে জানে না। তাছাড়া পুরো পরিবার এখন কবিরাজের হাতে বন্ধি অনিমা চুপচাপ কবিরাজের সামনে এসে বসে পড়ে। প্রিয়াকে দুজন ধরে রেখেছে। প্রিয়া খুব বিনয়ী ভাবে কেঁদে কেঁদে বলছে ওদের ছেড়ে দিতে। কিন্তু কবিরাজের মনে কোনো দয়া হচ্ছেনা।.........


লেখক :- আবদুল্লাহ আল মামুন



(গল্পটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না যেন!!)

Post a Comment

Give your opinion, please!

নবীনতর পূর্বতন