ভালোবাসার শক্তি
পর্ব:-৮
বুঝতে পারে পুরো এলাকা ঝুড়ে কোনো এক শক্তি ক্ষমতা চালাচ্ছে। মামুন প্রিয়ার সাথেই আছে, এখন আর তেমন একটা নিয়ন্ত্রণ হারায় না, যদিও নিয়ন্ত্রণ হারায়, সেটা প্রিয়া সামলে নিতে পারে। শুধু কথা বলাটা এখনো অপূর্ন হয়ে আছে। তান্ত্রিক এলাকায় পা রাখার পর থেকেই যেনো আক্রান্ত ব্যাক্তিগুলো ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যাচ্ছে। এলাকার জ্ঞানিদের সাথে তান্ত্রিকের কথা হয়, সে পারবে এই এলাকা থেকে এই বিপদ দুর করতে। কিন্তু কিছু দিন সময় লাগবে।
কারন তান্ত্রিককে কঠিন ধ্যানে বসতে হবে। এমনিতে তান্ত্রিক এলাকায় পা রাখার পর এই শক্তিটা ভয়ে শান্ত হয়ে আছে। কিন্তু যতই ভয় পাক, যেনো লড়াই করতে গেলে সেখানে পরাজিত না হয় তার জন্যই এই ধ্যান করতে হবে। এবং এই সময় কেউ যেনো বাহিরে না বের হয়। বের হলে সে মারাও যেতে পারে। এই জন্য প্রত্যেক এলাকা বাসি যার যার ঘরে নিজেদের বন্ধি করে। তান্ত্রিকের ধ্যানে বসার জন্য একজন আক্রান্ত ব্যাক্তিকে প্রয়োজন।
এমনিতে এলাকার প্রায় সব আক্রান্ত বাক্তিকে নিরাপত্তা কর্মীরা বন্ধি করে ফেলেছে। হাতে গোনা কয়েকজন বাকি আছে। তার মধ্যে মামুন একজন। তান্ত্রিক নিজেই একজন আক্রান্ত ব্যাক্তি খুজে নেয় এবং মন্ত্র সাধনা শুরু করে। মামুন সারাক্ষণ তার ফুটফুটে মেয়েটার সামনে বসে থাকে। মামুন নিজে থেকে মেয়েকে ছুতে পারে না, তাই প্রিয়া মামুনের হাতটা মেয়ের হাতের ওপর রেখে রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এদিকে তান্ত্রিকের মন্ত্র সাধনা শুরু করার পর এলাকার সব আক্রান্ত ব্যাক্তিগুলো পাগলের মতো পুরো এলাকায় ছোটাছুটি করতে থাকে। তখন এলাকাবাসিরা বুঝতে পারে কে কে আক্রান্ত..! কিন্তু এখনো মামুনের কোনো পরিবর্তন হয় নি, সে তার মেয়ের হাত ধরে তার পাশে বসে আছে। পুরো এলাকায় এমন ৬-৭ জন অাক্রান্ত ব্যাক্তির খোজ পাওয়া যায়, সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে, এবং এরা এতোটাই ভয়ানক হয়েছে যে, সামনে যাকে পাবে তাকেই চিরে খাবে।
আয়েশা বেগম জানালার সামনে বসে সব দেখছে, কিছু লোক শুধু দৌড়াচ্ছে। কিন্তু কেনো দৌড়াচ্ছে তা এখনো জানেন না। অতি কৌতুহল হওয়াটা যে সবার জন্যই বিপদজনক। আয়েশা বেগম বাহিরে কি হচ্ছে তা দেখার জন্য দরজা খুলে বাহিরে যায়, কারন যারা দৌড়াচ্ছে তারা সবাই যে এলাকার পরিচিত মুখ। ঠিক তখনই খেয়াল করেন এরা সবাই যে ফ্যাকাসে। মানে আয়েশা বেগম এখন কুরুক্ষেত্রের মাঝে অবস্থান করছেন।
ধীরে ধীরে পেছনের দিকে পা বাড়ান। এবং খেয়াল করেন একজন আয়েশা বেগমের দিকেই তেড়ে আসছে। আর কিছু না ভেবে উনি ঘরের দিকে দৌড় দেয়। কিন্তু মহিলার দৌড় আর পুরুষের দৌড় অনেক পার্থক্য। যার জন্য উনি ধরা পড়ে যান। প্রিয়া শাশুড়ির আওয়াজ শুনে দৌড়ে বাহিরের দিকে আসে। এবং প্রিয়াও চিৎকার দেয়। কারন আয়েশা বেগম ওদের সামনেই মাটিতে পড়ে আছে।
মামুন প্রিয়ার চিৎকার শুনে প্রিয়ার দিকে আসতে যাচ্ছিলো, কিন্তু যখন মেয়ের হাত থেকে মামুনের হাত আলাদা হলো তখনি মামুন নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে। মামুন প্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে বাহিরে বের হয়। প্রিয়া যেনো নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই সময়টাতে মামুনকেও নিয়ন্ত্রণ হারাতে হলো এখন আয়েশা বেগমকে বাচাতে যাবে? নাকি মামুনকে সামলাতে যাবে? আজ কি ছেলের হাতেই মাকে মরতে হবে?
মামুন আয়েশা বেগমের সামনে দাড়িয়ে আছে, পুরো মুখে ক্রোধের ছাপ। আজ আয়েশা বেগমকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে। কারন ৭জন নর পিশাচের হাত থেকে শাশুড়িকে কিভাবে বাচাবে? মামুন উপরে তাকিয়ে জোরে চিৎকার করছে। এতো জোরে চিৎকার করছে যে পশু,পাখি গুলো পর্যন্ত চুপ হয়ে যায়। মামুনের এমন আচরনে বাকি ব্যাক্তিগুলো থেমে যায়। পুরো এলাকা জুড়ে শুধু এখন মামুনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
মামুন অজ্ঞান মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। বাকিরা ধীরে ধীরে আয়েশা বেগমের দিকে এগিয়ে আসছে। প্রিয়া জোরে জোরে দোয়া দুরুদ পড়তে থাকে। ঠিক সেই সমটায় তান্ত্রিক এসে হাজির হয় তান্ত্রিক ওদের দিকে কিছু একটা ছুড়ে মারে। সাথে সাথে সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। প্রিয়া দৌড়ে এসে লোকজনের সাহায্যে শাশুড়িকে ঘরে নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনকে আনতে পারেনি। কারন মামুনকে তান্ত্রিক নিয়ে গেছে। পুরো গ্রামবাসীর সামনে তান্ত্রিক ৭জন আক্রান্ত ব্যাক্তিকে আসনে বসালেন।
এবং একটা বৃত্ত একে দিলেন। সবাইকে বলা হলো এই বৃত্তের ভিতরে যা কিছু ঘটে যাক, কেউ যেনো এর ভিতরে না আসে। আসলে হয়তো তার মৃত্যুও হতে পারে। এরপর তান্ত্রিক মন্ত্র পাঠ করা শুরু করে। প্রিয়া শাশুড়িকে ঘরে রেখে দৌড়ে স্বামীর কাছে আসে। তান্ত্রিকের কোনো কথাই প্রিয়া শুনেনি।
প্রিয়া বৃত্তের বাহিরে দাড়িয়ে আছে। তান্ত্রিকের মন্ত্রপাঠের এক পর্যায়ে মামুন তান্ত্রিকের গলা চেপে ধরে।
এলাকাবাসি কেউ বাঁচাতে আসছে না। কারন তান্ত্রিকের নিষেধ আছে।
প্রিয়া মামুনের এই কাজ দেখে বৃত্তের ভিতরে প্রবেশ করে, এবং তান্ত্রিকের পিছনে গিয়ে দাড়ায়। মামুন প্রিয়াকে দেখে তান্ত্রিকের গলা ছেড়ে দেয়। প্রিয়া আবার বাহিরে বের হয়ে যায়। প্রিয়াকে দেখে মামুনের তান্ত্রিকের গলা ছেড়ে দেওয়ায় তান্ত্রিক অবাক হয়ে যায়। তান্ত্রিক ভাবতে থাকে, কি এমন শক্তি আছে এই মেয়ের কাছে? কেনো ছেলেটা মেয়েটাকে দেখে চুপ হয়ে গেলো?
গ্রামবাসীও অবাক হয়ে গেলো। তান্ত্রিক আবার মন্ত্র শুরু করে। একে একে সবাই সুস্থ হতে থাকে। এখন শুধু মামুন বাকি আছে। তান্ত্রিক যতো চেষ্টা করে মামুনের উন্নতি নেই। মামুন তান্ত্রিকের সামনে বসে আছে। কিন্তু তার হুস নেই। অবশেষে তান্ত্রিক হাল ছেড়ে দেন। রাত হয়ে পড়ে, সকলে ধীরেধীরে ঘরের দিকে পা বাড়ায়। চারদিক শুন্য হয়ে পড়ছে। এখন শুধু মামুন, প্রিয়া আর তান্ত্রিক আছে। প্রিয়া তান্ত্রিককে অনুরোধ জানায় যেনো মামুনকে নিয়ে তাদের ঘরে যায়, ওখানে ধীরে সুস্থে মামুনের চিকিৎসা করা যাবে।
তান্ত্রিকও সম্মতি দেয়। তান্ত্রিক মামুনের ঘরে পা রাখার সাথে সাথে তান্ত্রিকের পুরো শরীর কেঁপে ওঠে আয়েশা বেগম নাতনীকে নিয়ে এক রুমে বসে আছে। প্রিয়া গিয়ে মেয়েকে কোলে নেয়। এদিকে তান্ত্রিক পুরো ঘর তল্লাশি করা শুরু করেন। কারন তান্ত্রিকের মতে এই ঘরে শক্তিধর কিছু একটা আছে।
তান্ত্রিকের সন্দেহ হয় ছোট্ট মেয়েটার প্রতি। মামুন এখনো হুসে নেই। মামুনকে আবারে আসনে বসানো হলো। সাথে প্রিয়াকেও, প্রিয়ার কোলে ছোট্ট মেয়েটা....
তান্ত্রিক মেয়েটার হাত মামুনের হাতের ওপর দিলো। পুরো ঘরে যেনো ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেলো তান্ত্রিকের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে কেবল ছোট্ট মেয়েটাই মামুনকে সুস্থ করতে পারবে। তাই আর দেরি না করে ওভাবেই মন্ত্র পড়া শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর মামুন অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে সাথে তান্ত্রিক একটা বোতলে ধোঁয়ার মতো কিছু একটা বন্ধি করলেন।
--আপনার স্বামী এখন সুস্থ, একটু পরই তার জ্ঞান ফিরবে। পুরো এলাকা থেকে এই সমস্যা দুর হয়ে গেছে।(তান্ত্রিক)
--আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অামাদের অনেক বড় উপকার করলেন।(প্রিয়া)
--উপকার আমি করি নি,, আপনার মেয়ে করেছে।
--আমার মেয়ে? কিভাবে?
--আপনার মেয়ে না থাকলে এই যুদ্ধে আমি পরাজিত হতাম। ওর শক্তি ব্যবহার করেই আমি আপনার স্বামীকে সুস্থ করতে পেরেছি।
--আচ্ছা আমি এটা বুঝলাম টা এই সমস্যাটার সাথে আমার মেয়ের কি সম্পর্ক? কেনো ওকে নিয়ে আসনে বসতে হলো? ওর বয়সতো এখনো ১ সপ্তাহ হয় নি। কিসের শক্তির কথা বলছেন?
--আচ্ছা একটা বিষয় কি কখনো আপনাদের মাথায় আসে নি? যারা এই সমস্যায় পড়ছে তারা কেউই ১০ দিনের বেশি বেঁচে থাকতে পারেনি। হয়তো জনগনের হাতে মরেছে, নাহলে কাউকে মেরে নিজেই মারা গেছে। সেই জায়গায় আপনার স্বামী ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে বেঁচে আছে। এবং আপনাদের কারো কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। এটা নিয়ে কখনো ভাবেননি?
--আসলে কখনো চিন্তা করে দেখিনি। কিন্তু এটা ভাবতাম যে হয়তো ওকে সামলে রাখতে পারছি।
--তা তো পেরেছেন ঠিকি, কিন্তু এর সবচেয়ে বড় অবদান আপনার মেয়ে।
--কিভাবে?
--আপনার মেয়ের মধ্যে এমন এক শক্তি রয়েছে যার কারনে এই ভাইরাস নামক সমস্যাটা আপনাদের কিছুই করতে পারেনি। এবং এর উৎসটা আপনি নিজে, আপনার মধ্যেও একটা মায়া শক্তি আছে। যার দ্বারা যে কাউকে মায়ায় ফেলতে পারেন। আপনার মনে আছে? আপনি আপনার স্বামীকে খুজতে বের হয়েছিলেন.. আবার কোনো সমস্যা ছাড়াই স্বামীকে নিয়ে ফিরে আসেন। সবই এই মায়া শক্তি আর আপনার মেয়ের জন্য। ঠিক এই ভাইরাসটাকেও আপনি মায়ায় ফেলে দিয়েছিলেন। অবশ্য এটা কোনে ভাইরাস নয়, এটা একটা পিশাচের আত্মা।
--পিশাচের আত্মা?
--হুম,, এই গ্রামে একটা পিশাচকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। এই জন্য প্রতিশোধ নিতে তার আত্মা ফিরে আসে। এই আত্মা এক সময় একজনের ওপর ভর করতো, যখনই আপনার স্বামীর ওপর ভর করতো তখন আপনার ধমকের কারনে সে ভয় পেতো, কারন আপনার মধ্যেই ছিলো আপনার এই মেয়ে। এতে করো ক্ষতি করতে পারতো না। বাকি সময়টা আপনার স্বামী সুস্থ থাকতো, তবুও আত্মার বশে থাকায় সে স্বাভাবিক হতে পারতো না।
--আমার মেয়ে আর আমার মধ্যে শক্তি আছে?
--হুম, আপনি মায়া শক্তির অধিকারী। আর আপনার মেয়ে এখনো অপ্রসিদ্ধ, যখন সে বুঝতে শিখবে, তখন সে এটা ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু তার জ্ঞান হলেও তাকে কখনো এই ব্যাপারটা জানাবেন না, কখনো তাকে কোনো কবিরাজ,তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যাবেন না।
এতেই তার মঙ্গল।
--আচ্ছা আমি কি এই পরিবারের কাউকে মায়া ফেলেছি?
--তা বলতে পারবো না, হয়তো বা হ্যা, হয়তো বা না..... আচ্ছা আমি এখন উঠি, এই আত্মাটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে....
আয়েশা বেগম ও প্রিয়া তান্ত্রিককে বিদায় জানালো। মামুন এখনো অজ্ঞান।
কিছুক্ষণ পরই মামুনের জ্ঞান ফিরে। মামুন একদম সুস্থ,, কথা বলতে পারে। আয়েশা বেগম খুবই খুশি, ২ মাস পর ছেলে কথা আজ বলছে। প্রিয়াও খুশি, মামুন নিজের মেয়েকে ১ম কোলে নিলো। খুব আদর করছে মেয়েকে। প্রিয়াকে আঘাত করার জন্য মামুন বার বার ক্ষমা চাচ্ছে। সব কিছু আবার ঠিক আগের মতো হয়ে যায়। রাতে শাশুড়ি খাওয়ার জন্য ছেলে আর ছেলের বৌকে ডাকতে আসে। প্রিয়া মেয়েকে কোলে নিয়ে মন মরা হয়ে মামুনের পাশে বসে আছে।
--কি হলো বৌমা? সব তো ঠিক হয়ে গেলো, এখনো মন মরা হয়ে বসে আছো যে....
--মা, তান্ত্রিকের কথা গুলো শুনেছেন?
--হুম শুনেছি, কেনো?
--আমার কাছে নাকি মায়া শক্তি আছে।
মামুন শুনে চকমে ওঠে....
--তাতে কি হয়েছে? এতো ভালো কথা।
--আমি নাকি যে কাউকে আমার মায়া আটকাতে পারি। তাহলে কি আপনাদের মায়ায় আটকে আমি এই পরিবারে রয়ে গেছি?
--এসব কি বলছো বৌমা?
--ঠিকইতো বলছি মা, আমি আপনাকে, ওনাকে ধোকা দিয়েছি।
--প্রিয়া,কি বলছো এসব উল্টাপাল্টা? (মামুন)
--ঠিকই বলছি, আমার এই মায়ায় পড়েই আপনি, মা আমাকে পছন্দ করেছন। আমি একটা ধোঁকাবাজ... আমি অপরাধী।
--তুমি পাগল হলে নাকি.. কি যা তা বলছো? কোনো মায়ায় পড়ে নয়,, তোমাকে পছন্দ করি বলেই বিয়ে করেছি। আচ্ছা এটা বলো, আমাদের কাছে কি মায়া শক্তি আছে?
--না
--তাহলে কেনো তুমি আমাদের পরিবারটাকে এতো ভালোবাসো।
--জানি না,
--ঠিক একই উত্তর আমাদের তরফ থেকে।। কোনো মায়া ছাড়াই তোমাকে পছন্দ করেছি। কিন্তু কেনো করেছি তা জানি না।
--সত্যি আপনারা আমাকে এতো ভালোবাসেন?
--দেখো মেয়ে কি বলে... তুমিতো এই ঘরের প্রান(আয়েশা বেগম)
--আর আমার মেয়েটা..?
--আমার নাতনি হলো এই ঘরের অক্সিজেন।
--আচ্ছা মা, কাল তো ওর ৭ দিন পূর্ণ হবে। ওর নাম কি রাখবো?
--তোমাদের পছন্দের একটা রাখো।
--আমার একটা পছন্দের নাম আছে.(মামুন)
--কি?
--অনিমা..
--ঠিক আছে, ওর নাম হবে অনিমা।
প্রিয়া মেয়ের দিকে তাকিয়ে মজা করে মেয়েকে বলছে।
--আমার মেয়ের অনিমা নাম পছন্দ হয়েছে?
অনিমা খুবই রহস্যজনক একটা হাসি দিলো।...................
লেখক :- আবদুল্লাহ আল মামুন
কারন তান্ত্রিককে কঠিন ধ্যানে বসতে হবে। এমনিতে তান্ত্রিক এলাকায় পা রাখার পর এই শক্তিটা ভয়ে শান্ত হয়ে আছে। কিন্তু যতই ভয় পাক, যেনো লড়াই করতে গেলে সেখানে পরাজিত না হয় তার জন্যই এই ধ্যান করতে হবে। এবং এই সময় কেউ যেনো বাহিরে না বের হয়। বের হলে সে মারাও যেতে পারে। এই জন্য প্রত্যেক এলাকা বাসি যার যার ঘরে নিজেদের বন্ধি করে। তান্ত্রিকের ধ্যানে বসার জন্য একজন আক্রান্ত ব্যাক্তিকে প্রয়োজন।
এমনিতে এলাকার প্রায় সব আক্রান্ত বাক্তিকে নিরাপত্তা কর্মীরা বন্ধি করে ফেলেছে। হাতে গোনা কয়েকজন বাকি আছে। তার মধ্যে মামুন একজন। তান্ত্রিক নিজেই একজন আক্রান্ত ব্যাক্তি খুজে নেয় এবং মন্ত্র সাধনা শুরু করে। মামুন সারাক্ষণ তার ফুটফুটে মেয়েটার সামনে বসে থাকে। মামুন নিজে থেকে মেয়েকে ছুতে পারে না, তাই প্রিয়া মামুনের হাতটা মেয়ের হাতের ওপর রেখে রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এদিকে তান্ত্রিকের মন্ত্র সাধনা শুরু করার পর এলাকার সব আক্রান্ত ব্যাক্তিগুলো পাগলের মতো পুরো এলাকায় ছোটাছুটি করতে থাকে। তখন এলাকাবাসিরা বুঝতে পারে কে কে আক্রান্ত..! কিন্তু এখনো মামুনের কোনো পরিবর্তন হয় নি, সে তার মেয়ের হাত ধরে তার পাশে বসে আছে। পুরো এলাকায় এমন ৬-৭ জন অাক্রান্ত ব্যাক্তির খোজ পাওয়া যায়, সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে, এবং এরা এতোটাই ভয়ানক হয়েছে যে, সামনে যাকে পাবে তাকেই চিরে খাবে।
আয়েশা বেগম জানালার সামনে বসে সব দেখছে, কিছু লোক শুধু দৌড়াচ্ছে। কিন্তু কেনো দৌড়াচ্ছে তা এখনো জানেন না। অতি কৌতুহল হওয়াটা যে সবার জন্যই বিপদজনক। আয়েশা বেগম বাহিরে কি হচ্ছে তা দেখার জন্য দরজা খুলে বাহিরে যায়, কারন যারা দৌড়াচ্ছে তারা সবাই যে এলাকার পরিচিত মুখ। ঠিক তখনই খেয়াল করেন এরা সবাই যে ফ্যাকাসে। মানে আয়েশা বেগম এখন কুরুক্ষেত্রের মাঝে অবস্থান করছেন।
ধীরে ধীরে পেছনের দিকে পা বাড়ান। এবং খেয়াল করেন একজন আয়েশা বেগমের দিকেই তেড়ে আসছে। আর কিছু না ভেবে উনি ঘরের দিকে দৌড় দেয়। কিন্তু মহিলার দৌড় আর পুরুষের দৌড় অনেক পার্থক্য। যার জন্য উনি ধরা পড়ে যান। প্রিয়া শাশুড়ির আওয়াজ শুনে দৌড়ে বাহিরের দিকে আসে। এবং প্রিয়াও চিৎকার দেয়। কারন আয়েশা বেগম ওদের সামনেই মাটিতে পড়ে আছে।
মামুন প্রিয়ার চিৎকার শুনে প্রিয়ার দিকে আসতে যাচ্ছিলো, কিন্তু যখন মেয়ের হাত থেকে মামুনের হাত আলাদা হলো তখনি মামুন নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে। মামুন প্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে বাহিরে বের হয়। প্রিয়া যেনো নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই সময়টাতে মামুনকেও নিয়ন্ত্রণ হারাতে হলো এখন আয়েশা বেগমকে বাচাতে যাবে? নাকি মামুনকে সামলাতে যাবে? আজ কি ছেলের হাতেই মাকে মরতে হবে?
মামুন আয়েশা বেগমের সামনে দাড়িয়ে আছে, পুরো মুখে ক্রোধের ছাপ। আজ আয়েশা বেগমকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে। কারন ৭জন নর পিশাচের হাত থেকে শাশুড়িকে কিভাবে বাচাবে? মামুন উপরে তাকিয়ে জোরে চিৎকার করছে। এতো জোরে চিৎকার করছে যে পশু,পাখি গুলো পর্যন্ত চুপ হয়ে যায়। মামুনের এমন আচরনে বাকি ব্যাক্তিগুলো থেমে যায়। পুরো এলাকা জুড়ে শুধু এখন মামুনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
মামুন অজ্ঞান মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। বাকিরা ধীরে ধীরে আয়েশা বেগমের দিকে এগিয়ে আসছে। প্রিয়া জোরে জোরে দোয়া দুরুদ পড়তে থাকে। ঠিক সেই সমটায় তান্ত্রিক এসে হাজির হয় তান্ত্রিক ওদের দিকে কিছু একটা ছুড়ে মারে। সাথে সাথে সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। প্রিয়া দৌড়ে এসে লোকজনের সাহায্যে শাশুড়িকে ঘরে নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনকে আনতে পারেনি। কারন মামুনকে তান্ত্রিক নিয়ে গেছে। পুরো গ্রামবাসীর সামনে তান্ত্রিক ৭জন আক্রান্ত ব্যাক্তিকে আসনে বসালেন।
এবং একটা বৃত্ত একে দিলেন। সবাইকে বলা হলো এই বৃত্তের ভিতরে যা কিছু ঘটে যাক, কেউ যেনো এর ভিতরে না আসে। আসলে হয়তো তার মৃত্যুও হতে পারে। এরপর তান্ত্রিক মন্ত্র পাঠ করা শুরু করে। প্রিয়া শাশুড়িকে ঘরে রেখে দৌড়ে স্বামীর কাছে আসে। তান্ত্রিকের কোনো কথাই প্রিয়া শুনেনি।
প্রিয়া বৃত্তের বাহিরে দাড়িয়ে আছে। তান্ত্রিকের মন্ত্রপাঠের এক পর্যায়ে মামুন তান্ত্রিকের গলা চেপে ধরে।
এলাকাবাসি কেউ বাঁচাতে আসছে না। কারন তান্ত্রিকের নিষেধ আছে।
প্রিয়া মামুনের এই কাজ দেখে বৃত্তের ভিতরে প্রবেশ করে, এবং তান্ত্রিকের পিছনে গিয়ে দাড়ায়। মামুন প্রিয়াকে দেখে তান্ত্রিকের গলা ছেড়ে দেয়। প্রিয়া আবার বাহিরে বের হয়ে যায়। প্রিয়াকে দেখে মামুনের তান্ত্রিকের গলা ছেড়ে দেওয়ায় তান্ত্রিক অবাক হয়ে যায়। তান্ত্রিক ভাবতে থাকে, কি এমন শক্তি আছে এই মেয়ের কাছে? কেনো ছেলেটা মেয়েটাকে দেখে চুপ হয়ে গেলো?
গ্রামবাসীও অবাক হয়ে গেলো। তান্ত্রিক আবার মন্ত্র শুরু করে। একে একে সবাই সুস্থ হতে থাকে। এখন শুধু মামুন বাকি আছে। তান্ত্রিক যতো চেষ্টা করে মামুনের উন্নতি নেই। মামুন তান্ত্রিকের সামনে বসে আছে। কিন্তু তার হুস নেই। অবশেষে তান্ত্রিক হাল ছেড়ে দেন। রাত হয়ে পড়ে, সকলে ধীরেধীরে ঘরের দিকে পা বাড়ায়। চারদিক শুন্য হয়ে পড়ছে। এখন শুধু মামুন, প্রিয়া আর তান্ত্রিক আছে। প্রিয়া তান্ত্রিককে অনুরোধ জানায় যেনো মামুনকে নিয়ে তাদের ঘরে যায়, ওখানে ধীরে সুস্থে মামুনের চিকিৎসা করা যাবে।
তান্ত্রিকও সম্মতি দেয়। তান্ত্রিক মামুনের ঘরে পা রাখার সাথে সাথে তান্ত্রিকের পুরো শরীর কেঁপে ওঠে আয়েশা বেগম নাতনীকে নিয়ে এক রুমে বসে আছে। প্রিয়া গিয়ে মেয়েকে কোলে নেয়। এদিকে তান্ত্রিক পুরো ঘর তল্লাশি করা শুরু করেন। কারন তান্ত্রিকের মতে এই ঘরে শক্তিধর কিছু একটা আছে।
তান্ত্রিকের সন্দেহ হয় ছোট্ট মেয়েটার প্রতি। মামুন এখনো হুসে নেই। মামুনকে আবারে আসনে বসানো হলো। সাথে প্রিয়াকেও, প্রিয়ার কোলে ছোট্ট মেয়েটা....
তান্ত্রিক মেয়েটার হাত মামুনের হাতের ওপর দিলো। পুরো ঘরে যেনো ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেলো তান্ত্রিকের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে কেবল ছোট্ট মেয়েটাই মামুনকে সুস্থ করতে পারবে। তাই আর দেরি না করে ওভাবেই মন্ত্র পড়া শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর মামুন অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে সাথে তান্ত্রিক একটা বোতলে ধোঁয়ার মতো কিছু একটা বন্ধি করলেন।
--আপনার স্বামী এখন সুস্থ, একটু পরই তার জ্ঞান ফিরবে। পুরো এলাকা থেকে এই সমস্যা দুর হয়ে গেছে।(তান্ত্রিক)
--আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অামাদের অনেক বড় উপকার করলেন।(প্রিয়া)
--উপকার আমি করি নি,, আপনার মেয়ে করেছে।
--আমার মেয়ে? কিভাবে?
--আপনার মেয়ে না থাকলে এই যুদ্ধে আমি পরাজিত হতাম। ওর শক্তি ব্যবহার করেই আমি আপনার স্বামীকে সুস্থ করতে পেরেছি।
--আচ্ছা আমি এটা বুঝলাম টা এই সমস্যাটার সাথে আমার মেয়ের কি সম্পর্ক? কেনো ওকে নিয়ে আসনে বসতে হলো? ওর বয়সতো এখনো ১ সপ্তাহ হয় নি। কিসের শক্তির কথা বলছেন?
--আচ্ছা একটা বিষয় কি কখনো আপনাদের মাথায় আসে নি? যারা এই সমস্যায় পড়ছে তারা কেউই ১০ দিনের বেশি বেঁচে থাকতে পারেনি। হয়তো জনগনের হাতে মরেছে, নাহলে কাউকে মেরে নিজেই মারা গেছে। সেই জায়গায় আপনার স্বামী ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে বেঁচে আছে। এবং আপনাদের কারো কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। এটা নিয়ে কখনো ভাবেননি?
--আসলে কখনো চিন্তা করে দেখিনি। কিন্তু এটা ভাবতাম যে হয়তো ওকে সামলে রাখতে পারছি।
--তা তো পেরেছেন ঠিকি, কিন্তু এর সবচেয়ে বড় অবদান আপনার মেয়ে।
--কিভাবে?
--আপনার মেয়ের মধ্যে এমন এক শক্তি রয়েছে যার কারনে এই ভাইরাস নামক সমস্যাটা আপনাদের কিছুই করতে পারেনি। এবং এর উৎসটা আপনি নিজে, আপনার মধ্যেও একটা মায়া শক্তি আছে। যার দ্বারা যে কাউকে মায়ায় ফেলতে পারেন। আপনার মনে আছে? আপনি আপনার স্বামীকে খুজতে বের হয়েছিলেন.. আবার কোনো সমস্যা ছাড়াই স্বামীকে নিয়ে ফিরে আসেন। সবই এই মায়া শক্তি আর আপনার মেয়ের জন্য। ঠিক এই ভাইরাসটাকেও আপনি মায়ায় ফেলে দিয়েছিলেন। অবশ্য এটা কোনে ভাইরাস নয়, এটা একটা পিশাচের আত্মা।
--পিশাচের আত্মা?
--হুম,, এই গ্রামে একটা পিশাচকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। এই জন্য প্রতিশোধ নিতে তার আত্মা ফিরে আসে। এই আত্মা এক সময় একজনের ওপর ভর করতো, যখনই আপনার স্বামীর ওপর ভর করতো তখন আপনার ধমকের কারনে সে ভয় পেতো, কারন আপনার মধ্যেই ছিলো আপনার এই মেয়ে। এতে করো ক্ষতি করতে পারতো না। বাকি সময়টা আপনার স্বামী সুস্থ থাকতো, তবুও আত্মার বশে থাকায় সে স্বাভাবিক হতে পারতো না।
--আমার মেয়ে আর আমার মধ্যে শক্তি আছে?
--হুম, আপনি মায়া শক্তির অধিকারী। আর আপনার মেয়ে এখনো অপ্রসিদ্ধ, যখন সে বুঝতে শিখবে, তখন সে এটা ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু তার জ্ঞান হলেও তাকে কখনো এই ব্যাপারটা জানাবেন না, কখনো তাকে কোনো কবিরাজ,তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যাবেন না।
এতেই তার মঙ্গল।
--আচ্ছা আমি কি এই পরিবারের কাউকে মায়া ফেলেছি?
--তা বলতে পারবো না, হয়তো বা হ্যা, হয়তো বা না..... আচ্ছা আমি এখন উঠি, এই আত্মাটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে....
আয়েশা বেগম ও প্রিয়া তান্ত্রিককে বিদায় জানালো। মামুন এখনো অজ্ঞান।
কিছুক্ষণ পরই মামুনের জ্ঞান ফিরে। মামুন একদম সুস্থ,, কথা বলতে পারে। আয়েশা বেগম খুবই খুশি, ২ মাস পর ছেলে কথা আজ বলছে। প্রিয়াও খুশি, মামুন নিজের মেয়েকে ১ম কোলে নিলো। খুব আদর করছে মেয়েকে। প্রিয়াকে আঘাত করার জন্য মামুন বার বার ক্ষমা চাচ্ছে। সব কিছু আবার ঠিক আগের মতো হয়ে যায়। রাতে শাশুড়ি খাওয়ার জন্য ছেলে আর ছেলের বৌকে ডাকতে আসে। প্রিয়া মেয়েকে কোলে নিয়ে মন মরা হয়ে মামুনের পাশে বসে আছে।
--কি হলো বৌমা? সব তো ঠিক হয়ে গেলো, এখনো মন মরা হয়ে বসে আছো যে....
--মা, তান্ত্রিকের কথা গুলো শুনেছেন?
--হুম শুনেছি, কেনো?
--আমার কাছে নাকি মায়া শক্তি আছে।
মামুন শুনে চকমে ওঠে....
--তাতে কি হয়েছে? এতো ভালো কথা।
--আমি নাকি যে কাউকে আমার মায়া আটকাতে পারি। তাহলে কি আপনাদের মায়ায় আটকে আমি এই পরিবারে রয়ে গেছি?
--এসব কি বলছো বৌমা?
--ঠিকইতো বলছি মা, আমি আপনাকে, ওনাকে ধোকা দিয়েছি।
--প্রিয়া,কি বলছো এসব উল্টাপাল্টা? (মামুন)
--ঠিকই বলছি, আমার এই মায়ায় পড়েই আপনি, মা আমাকে পছন্দ করেছন। আমি একটা ধোঁকাবাজ... আমি অপরাধী।
--তুমি পাগল হলে নাকি.. কি যা তা বলছো? কোনো মায়ায় পড়ে নয়,, তোমাকে পছন্দ করি বলেই বিয়ে করেছি। আচ্ছা এটা বলো, আমাদের কাছে কি মায়া শক্তি আছে?
--না
--তাহলে কেনো তুমি আমাদের পরিবারটাকে এতো ভালোবাসো।
--জানি না,
--ঠিক একই উত্তর আমাদের তরফ থেকে।। কোনো মায়া ছাড়াই তোমাকে পছন্দ করেছি। কিন্তু কেনো করেছি তা জানি না।
--সত্যি আপনারা আমাকে এতো ভালোবাসেন?
--দেখো মেয়ে কি বলে... তুমিতো এই ঘরের প্রান(আয়েশা বেগম)
--আর আমার মেয়েটা..?
--আমার নাতনি হলো এই ঘরের অক্সিজেন।
--আচ্ছা মা, কাল তো ওর ৭ দিন পূর্ণ হবে। ওর নাম কি রাখবো?
--তোমাদের পছন্দের একটা রাখো।
--আমার একটা পছন্দের নাম আছে.(মামুন)
--কি?
--অনিমা..
--ঠিক আছে, ওর নাম হবে অনিমা।
প্রিয়া মেয়ের দিকে তাকিয়ে মজা করে মেয়েকে বলছে।
--আমার মেয়ের অনিমা নাম পছন্দ হয়েছে?
অনিমা খুবই রহস্যজনক একটা হাসি দিলো।...................
লেখক :- আবদুল্লাহ আল মামুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Give your opinion, please!