ভালোবাসার শক্তি
পর্ব:-৪ (সিজন-২)
সকালে মামুন দাত ব্রাশ করতে করতে বাহিরে যায়। বাহির থেকে মেয়ের রুমের দিকে চোখ পড়তেই দেখে আদি গ্রিল ধরে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে।
--এই সকাল সকাল ওখানে কি করছো? বাহিরে এসো। কতো সুন্দর আবহাওয়া।(মামুন)
--দরজা রুমের ভেতর থেকে লাগানো।(আদি)
--তুমি এখানে কি করে এলে?
--অনিমা এখানে এনে ভেতর থেকে লক করে দিয়েছে।
--দেখো বজ্জাত মেয়ে কি করেছে, আমি আসছি.....
মামুন দৌড়ে অনিমার রুমে যায়, মামুনের দৌড় দেখে প্রিয়াও ওর পিছে পিছে মেয়ের রুমে যায়। মামুন দরজা ধাক্কাচ্ছে,
--আপনি সকাল সকাল ওদের বিরক্ত করছেন কেনো?(প্রিয়া)
--দেখাচ্ছি তোমাকে।
অনেক্ষন পর অনিমা দরজা খোলে।
--কি হয়েছে পাপা?(ঘুম ঘুম চোখে)
--আদি কোথায়?
--কোন আদি?
--তোমার জামাই আদি।
অনিমার হঠ্যাৎ আদির কথা খেয়াল হয়, রুমের দিকে তাকিয়ে বলে...
--মনে হয় বাহিরে গেছে।
মামুন অনিমাকে সরিয়ে ব্যালকনির দরজাটা খোলে।
ব্যালকনি থেকে আদি বেরিয়ে আসে। অনিমা মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে রুমের এক কোনায় গিয়ে দাড়ালো।
--একি? তুমি ব্যালকনিতে কি করছো? দরজা আটকালো কে?(প্রিয়া)
--কে আবার? তোমার মেয়ে। বেচারা সারারাত ওখানে ছিলো।(মামুন)
--এটা কোন ধরনের আচরন? জামাইর সাথে এমন ব্যবহার করে? অসভ্য কোথাকার।
অনিমা দাড়িয়ে দাড়িয়ে নখ চিবুচ্ছে। বাবা কিছু না বললেও,মা ঠিকই শাসন করে। তাই প্রিয়ার ভয়ে একটু দুরেই দাড়িয়ে আছে।
--আচ্ছা মা, বাদ দিন। ছোট তো, বকে লাভ কি? বুঝালে ঠিকই বুঝবে।(আদি)
--এখনতো ওর দায়িত্ব তোমার, কিভাবে সমলাবে সামলাও, বুঝাতে পারলেও বোঝাও।(মামুন)
--ঠিক আছে, আমি বোঝাবো।
প্রিয়া সোজা নাস্তা বানাতে চলে আসে।
পিছু পিছু অনিমাও আসে।
--তোর এখানে কি?(প্রিয়া)
--তোমাকে সাহায্য করবো।
--এতো বছর একা একা নাস্তা বানাই, কখনো আপনাকে পাকের ঘরে দেখলাম না, আজ সোজা চলে এলেন? যা, রুমে যা।
--ওই লোকটা যদি বকে?
--কোন লোক?
--তোমাদের জামাই।
--জামাইকে কেউ এভাবে বলে? ওর সাথে এমন কেনো করলি?
--মা, সত্যি বলছি, ওনার সামনে থাকলে আমার অসস্তি লাগে।
--নতুন বিয়ে তো, এমন হয়, ঠিক হয়ে যাবে। এখন ওর কাছে যা, রাতে যা করেছিস তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নে।
--বকা দিলে?
--বকবে না, যা....
.
অনিমা ধীরে পায়ে রুমে আসলো। আদি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, মনে হয় ঘুমাচ্ছে।
--এই যে, আপনি ঘুমাচ্ছেন?(এক ধাক্কা দিয়ে)
আদি তড়িঘড়ি করে লাফ দিয়ে উঠলো।
--কিক কি হয়েছে?
--রাতের জন্য সরি।
--এই জন্য এভাবে উঠালে?
--হুম, কেনো? কি হয়েছে?
--না কিছুনা, ওকে...
আদি আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।
--আরে উঠুন(আবার ধাক্কা দিয়ে)
--আবার কি হলো?
--আমাকে ক্ষমা করছেন?
--হ্যা হ্যা, ক্ষমা করে দিছি।
--আচ্ছা ঘুমান।
--ধন্যবাদ....
অনিমা মায়ের কাছে যায়...
--কিরে? আবার চলে এলি কেনো?
--উনি ক্ষমা করে দিছে।
--তা তো ভালো কথা, চলে এলি কেনো?
--তোমাকে সাহায্য করতে।
--ঠিক আছে, দেখে নে, ও বাড়িতে গেলে তো নিজের হাতেই রান্না করতে হবে। এখন শিখে নে।
--আচ্ছা।
একটু পর........
--যা, জামাইকে নাস্তা খেতে ডেকে নিয়ে আয়।
--আচ্ছা
অনিমা রুমে আসে। আদি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।
--এই যে, উঠুন (১ ধাক্কা দিয়ে)
আদি কাচা ঘুমে লাফিয়ে উঠলো।
--হুম হুম, কি হয়েছে?
--নাস্তা করতে আসুন।
--এই মেয়ে, তোমার জ্ঞানবুদ্ধি নেই? দেখছো আমি ঘুমাচ্ছি, এভাবে ঘুমের মধ্যে কেউ ডাকে?নাস্তা রেখে দিলেই তো হয়।
অনিমা ঠোট বাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে প্রিয়ার কাছে আসে।
--কি হয়েছে? কাঁদছিস কেনো?
--ওই লোকটা আমাকে বকেছে।
--কেনো?
কি কি করেছে সব প্রিয়াকে বলে...
--হায় হায়,,, আমার মেয়ে এতো গাধী... ও যখন ঘুমাচ্ছে, তখন ডাকার প্রয়োজন ছিলো?
--তুমিইতো বললে ডাকতে, আমার কি দোষ?
--তোর জ্ঞানবুদ্ধি কি কম? এটা কি বলে দিতে হবে?
--সবাই আমাকে বকে..... পাপা ছাড়া।
এভাবেই দিনগুলো চলতে থাকে, অনিমা আদির থেকে একটু দুরেই থাকে, নিজেকে ছুতে দেয় না। এক ঘরে থাকে, কিন্তু আলাদা। মামুন আর প্রিয়া এসবের কিছুই জানে না। মামুন ভেবে নিয়েছে বিপদ কেটে গেছে। কেননা ১৫-২০ দিন যাবত সব কিছু স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। মেয়ের মধ্যেও কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছে না। আদি সবার সাথে খুব ভালোভাবেই মিশে গেছে, শুধু অনিমা ছাড়া।
অনিমা এখনো আদিকে মেনে নিতে পারছে না, হয়তো একটু সময় লাগবে। এখনো ছোট তো। আদিও এতটা জোর দেখায় না। তবে অনিমার মন মতো চলার চেষ্টা করে। যেনো মেয়েটার মনের মতো হয়ে ওঠা যায়। এভাবে দেড়মাস পার হয়ে যায়। অনিমা ধীরেধীরে আদির প্রেমে পড়ছে। আদি যেনো ওর ভালো লাগায় পরিনত হচ্ছে।
আদি সবসময় কাজে শেষে আসার সময় অনিমার জন্য ছোট ছোট গিফট নিয়ে আসে। প্রতিদিন চিপস, চকলেট, ফুসকা, আইসক্রিম এগুলো দিয়েই অনিমার মনটা নরম করেছে। মামুন আর প্রিয়া ওদের বিষয়ে নাক গলায় না, কেননা এটা মেয়ের সংসার, মেয়েই বুঝে নিবে।
এমনই একদিন অয়ন খেলতে খেলতে আবার হারিয়ে যায়। কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না। মামুন জানে, এখন নিজে ছেলেকে নিজে খুজে বের করা ছাড়া কোনো উপায় নেই, কেননা অনিমার বিয়ে দিয়ে দিয়েছে, তার সব ক্ষমতা শেষ, সে অয়নকে খুজে বের করতে পারবে না। অনিমা ভাইকে খোজার চেষ্টা করে, কিন্তু মামুন বলে, এখন আর তার দ্বারা অয়নকে খুজে বের করা সম্ভব নয়। কারন বিয়ের পর তার সব শক্তি শেষ হয়ে গেছে।
বাবার কথা শুনে অনিমা হাল ছেড়ে দেয়। আদি শক্তির ব্যাপারটা শুনে অবাক হয়ে যায়। কেননা সে ১ম এটা শুনলো। এভাবে ১দিন ২দিন করে ১সপ্তাহ হয়ে যায়। অয়ন ফিরে আসে না। অনিমা আর প্রিয়া খুব কাঁদছে। মামুন আর আদি তন্নতন্ন করে অয়নকে খুজছে।পুলিশে খবর দেওয়া হয়, পত্রিকায়ও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুই হয় না।
প্রায় ১মাস হয়ে গেলো, অয়নের খবর নেই, ছেলের শোকে প্রিয়ার অবস্থার অবনতি হয়। ১ মাস পর এক সন্ধ্যায় অয়ন ঘরে ফিরে আসে। অয়নকে পেয়ে সবাই যেনো খুশিতে পাগল প্রায়, প্রিয়া যেন প্রান ফিরে পেলো। কোথায় গেছে? কিভাবে গেছে? এতোদিন কোথায় ছিলো, কিভাবে এসেছে অয়ন তার কিছুই বলতে পারছে না। কেউ আর এই প্রশ্ন ২য় বার করেনি, কারন ছেলে ফিরে এসেছে এটাই অনেক। প্রিয়ার রাতে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। সকালে ঘুম ভেঙে আবার অয়নকে হারিয়ে ফেলে, অয়নকে আবার কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। প্রিয়ার চিৎকারে মামুনের ঘুম ভাঙে,
--কি হয়েছে?
--অয়নকে পাওয়া যাচ্ছে না।
--বাহিরে গেছে হয়তো, গিয়ে দেখো।
--দরজা ভেতর থেকে লাগানো। ও বাহিরে কি করে যাবে?
--তাই তো,...
প্রিয়ার চেঁচামেচি শুনে অনিমা দৌড়ে আসে।
--কি হয়েছে মা?
--অয়নকে আবারও পাওয়া যাচ্ছে না। দরজা ভেতর থেকে লাগানো ছিলো, কিন্তু অয়ন রুমে নেই।
--মা, তোমাদের জামাইকেও পাচ্ছি না। দরজা ভেতর থেকে লাগানো, কিন্তু উনি রুমে নেই।
মামুনের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।
এসব কি হচ্ছে? এক দিকে ছেলে নেই, অন্যদিকে জামাইও গায়েব। এসবের মানে কি? তান্ত্রিক তো বলেছিলো মেয়ের বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। তাহলে এসব কি? অনিমার কাছেতো এখন কোনো ক্ষমতা নেই, তাহলে যোযো কেনো এসব করছে? যোযো বলে কি আসলেই কেউ আছে? নাকি তান্ত্রিক মিথ্যে বলেছিলো। সবার অগোচরে তান্ত্রিক কি কোনো খেলা খেলছে? কিন্তু কিভাবে? সে তো সবার সামনেই আত্মহত্যা করেছিলো।
তান্ত্রিক বলেছিলো, কবিরাজ মারা যায় নি, সেটা নাকি চোখের ভুল ছিলো, একই ভাবে তান্ত্রিকের নিজের মৃত্যুটাও চোখের ভুল নয়তো? ঘুরেফিরে তান্ত্রিকের ওপরই মামুনের সন্দেহ হচ্ছে। মামুন সন্দেহের বসে আবার তান্ত্রিকের সেই আস্তানায় যায়। সবাইকে তান্ত্রিকের মৃত্যুর কথা জিজ্ঞেস করে। সবাই বলে সত্যিই তান্ত্রিকের মৃত্যু হয়েছে। মামুনের কোনো ভাবেই এটা বিশ্বাস হচ্ছে না। এই তান্ত্রিক আর কবিরাজ ছাড়া আর কেউ অনিমার ক্ষমতার ব্যাপারে জানে না।
যদি এই ক্ষতি কেউ করে থাকে, তবে সেটা এদের মধ্যেই কেউ করেছে। মামুন সবাইকে অনুরোধ করে, যেনো তান্ত্রিকের কবরটা খোড়া হয়। যদি ভেতরে লাশ থাকে, তাহলে কবিরাজ দোষী, আর লাশ না থাকলে তান্ত্রিক দোষী। মামুন সবাইকে বলছে, ভেতরে লাশ নেই, যেনো কবরা খোড়ে, কিন্তু কেউ রাজি নয়। শেষে ২-৩ জন রাজি হয়।
সবাই একপাশে দাড়িয়ে তামাশা দেখছে। কবর খোড়া শেষ হলে সবাই কাছে আসে। পুরো কবর খালি। কবরে কোনো লাশ নেই। তার মানে যোযো, কবিরাজ, মেয়ের বিয়ে দেওয়া এই সব তান্ত্রিকের মন গড়া ছিলো? মামুন কবরের পাশে বসে পরে। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে। যাকে বিশ্বাস করলাম, সেই বুকে ছুরি বসালো? অজানতেই একফোটা চোখের পানি কবরের মাটিতে পড়লো........
লেখক :- আবদুল্লাহ আল মামুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Give your opinion, please!