ভালোবাসার শক্তি

পর্ব:-৩ (সিজন-২)



একটা ছুরি দিয়ে তান্ত্রিক নিজের হতে নিজের গলা কেটে ওখানেই মারা যায়, এটা এতোটাই দ্রুত হলো যে মামুন এখনো ঘোরের মধ্যে আছে, চোখের সামনে এটা কি হলো? কথার মাঝখানে কেনো উনি এমন করলেন? তান্ত্রিকের লোকেরা দৌড়ে আসলো, তান্ত্রিককে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যায় হাসপাতালে নেওয়ার আগেই উনি মারা যায়। তান্ত্রিক কি আত্মহত্যা করলো? কিন্তু কেনো? পুরো কথা কেনো বললো না,?


মামুন বাসায় ফিরে....

--কোথায় গিয়েছিলেন?(প্রিয়া)

--তোমার মনে আছে আমাকে এক তান্ত্রিক বাচিয়েছিলো.

--হ্যা.!

--ওনার কাছে গিয়েছিলাম।
--কেনো?
--যদি উনি সাহায্য করতে পারেন, এই জন্য।
--কিছু বললো?
--বলতে চাচ্ছিলো, তার আগেই উনি মারা গেছেন।
--কি বলছেন? কিভাবে?

মামুন পুরোটা প্রিয়াকে খুলে বলে..।প্রিয়াও চিন্তায় পরে গেলো। কি হচ্ছে এসব? অনিমাও ধীরে ধীরে রোগা হয়ে পড়ছে। মামুনের কপালে চিন্তার ভাজ। কে এই যোযো? যার জন্য তার মেয়েটা এতো কষ্ট পাচ্ছে, কোথায় পাওয়া যাবে ওই কবিরাজকে? পেলেই বা কি করবে? এতো চিন্তা যে মানসিকতা ধ্বংস করে দেয়। এলাকা, এলাকার বাহিরে প্রায় সবদিকেই মামুন ওই কবিরাজের খোজ লাগায়, কোথাও কবিরাজের খবর নেই।

আগের বাড়িতেও তালা লাগানো। আশেপাশের লোক জন বলছে অনেকদিন যাবত কবিরাজ বাড়িতে আসে না। তান্ত্রিক কি সত্যি বলেছে যে কবিরাজ এখনো মরেনি। নাকি মনগড়া? অন্যকাউকে এই ব্যাপারটা শেয়ার করাও বিপদজনক।

মামুন তান্ত্রিকের কথাগুলো ভাবতে থাকে, অনিমার বিয়ে দেওয়া ছাড়া কি আর কোনো উপায় নেই কিন্তু এতো কম বয়সে অনিমাকে কোথায় বিয়ে দিবে? এর জন্য অনিমার থেকে অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন, তা না হলে যদি মেয়ের অমত থাকে, বাবা হিসেবে মেয়ের কাছে সারাজীবন অপরাধী হয়ে থাকতে হবে। কিন্তু এই বাচ্চা মেয়েকে কিভাবে বিয়ের কথা বলবে? মামুনের বিবেকে বাধা দেয়। কোনো উপায় না পেয়ে প্রিয়া মেয়ের কাছে যায়।

--মা, এখন কেমন আছিস? (প্রিয়া)
--আমিতো ভালোই, কেনো?
--এই যে তুই ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করিস না, কেমন শুকিয়ে গেছিস।
--৩ বেলা পেট ভরে খাই, মোটা না হলে আমি কি করবো?
--মা, তোকে একটা কথা বলি?
--বলো
--তোর বিয়ে নিয়ে কথা বলতে এসেছি।
--আমার বিয়ে?
--হুম
--আমিতো ছোট, আমার বিয়ে কেনো?
--তোর ভালোর জন্যই তোকে বিয়ে দেওয়াটা প্রয়োজন।
--পাপা, কোথায়? পাপা জানে?
--হুম
--পাপা বলেছে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে?
--হুম
অনিমা মন খারাপ হয়ে গেলো। কেনো এতো তাড়াতাড়ি পরিবার ছেড়ে যাবে?
--কি ভাবছিস? তুই বিয়ে করবি?
--মা, কেনো আমাকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাচ্ছো? আমি কি বেশি জ্বালাচ্ছি?
--নারে মা, এমন কিছু না, কিন্তু এই বিয়েটা তোর ভালোর জন্যই করানো হবে।
--ঠিক আছে, তোমরা যা ভালো বোঝো।
প্রিয়া মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে এলো।
--কি বললো অনিমা?(মামুন)
--ওর কোনো আপত্তি নেই। আপনি ছেলে দেখতে পারেন।
--যাক বাবা, সস্তি পেলাম। আমি কালই ছেলের খোজে নেমে পড়বো।

মামুন আশেপাশের ঘটকদের কাছ থেকে খবর নিয়ে ছেলে দেখা শুরু করে। একে একে অনেকগুলো ছেলে দেখে, কাউকেই তাদের পছন্দ হয় না, বাবা মায়ের পছন্দ হলে মেয়ের হয় না, আবার মেয়ের হলে বাবা মায়ের হয় না। শেষমেশ একটা ফটো সবার পছন্দ হয়, ছেলের ব্যাপারে খোজ নিয়ে জানা যায়, ছেলের নাম আদি। কিন্তু ছেলেটা এতিম, ছেলের পরিবারে কেউ নেই, ছোটবেলা থেকে চাচার কাছে বড় হয়েছে, কয়েকদিন আগে চাচাও মারা যায়। এখন ছেলে একা থাকে।

এমনিতে চাচার একটা ব্যাবসা ছিলো, এখন সেটা আদি সামলায়। মামুন সব কিছু চিন্তা করে দেখলো একা পরিবার, মেয়ের সংসার মেয়েই চালাবে। কারো সাথে সমস্যা হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না ছেলের মতামত নেওয়া হলো, ছেলেও রাজি। ছেলের পক্ষে কেউ নেই, এক দুঃসম্পর্কের মামা আছে, সে অসুস্থ থাকায় আসতে পারবে না। তাই ছেলের সাথেই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হলো। মামুন খুব চিন্তায় আছে, একটা উটকো সমস্যার জন্য মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে হচ্ছে। 

নিজেদের থেকে বিদায় দিতে হচ্ছে। অনিমা কি সংসার সামলাতে পারবে? ও যে এখনো এসবের কিছুই বোঝে না। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে অনিমা বা পরিবারের কারো কোনো সমস্যা দেখা যায় নি।
বলতে গেলে এখন চারপাশ শান্ত।

বিয়ের আগেই আদির সাথে সবার ভালোভাবে কথা জমে উঠে, ছেলেটা খুবই ভালো। যদি কখনো কোনো বিপদ আসে, তাহলে আদি কি অনিমাকে আগলে রাখতে পারবে? আদি অনিমার শক্তি বা ক্ষমতার ব্যাপারে কিছুই জানে না। মামুন ভাবলো বিয়ের পর সব আদিকে খুলে বলবে। এখন চুপ থাকাই শ্রেয়, কেননা তান্ত্রিক বলেছিলো, বিয়ের পর অনিমার সমস্ত ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে এবং সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

সুতরাং বিয়ের পরেতো আর কোনো সমস্যাই নেই। কোনো অনুষ্ঠান নয়, ছোট করেই বিয়েটা পড়ানো হবে। বিয়ের দিন সকাল থেকেই প্রাকৃতির মন খারাপ। ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে, চারদিক ঘন মেঘে অন্ধকার করে রেখেছে। দুপুরে কাজি আসে, যেই মেয়ে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছিলো, সে মেয়ে এখন বায়না ধরেছে, সে বিয়ে করবে না। নিজের রুমের দরজা আটকে ভিতরে বসে আছে।

অনেক্ষন ধাক্কাধাক্কি করার পরও খুলেনা, হঠ্যাৎ কি মনে করে মত বদলালো? এখন আদিকে মুখ দেখাবে কি করে? ছেলেটা একটু পরই আসবে, তার আগেই মেয়েকে রাজি করাতে হবে। অনিমা রুমের ভেতরে গড়গড় করছে, বোঝা যাচ্ছে প্রচন্ড রেগে আছে। কিন্তু রেগে যাওয়ার কারন কি? সব তো ভালোই ছিলো। আদি চলে আসে, অনিমা এখনো দরজা খোলেনি। কাজি আর আদি অনিমার জন্য অপেক্ষা করছে।

--কি হলো? আপনার মেয়েকে ডাকুন, আর কতক্ষন?(কাজি)
--আদি,, একটু এদিকে আসবে? (মামুন)
--জ্বি বলুন...(আদি)
--অনিমা রাগ করে দরজা আটকে রেখেছে, ও বলছে বিয়ে করবে না।
--ও এই ব্যাপার? এখনো ছোট তো, সমস্যা নেই, আমি নিয়ে আসছি, আপনি এখানেই থাকুন।
--পারবে না, দরজা লাগানো।
--চেষ্টা করে দেখি।
--আচ্ছা যাও।

মামুন কাজি সাহেবকে নিয়ে কথায় ব্যস্ত হয়ে গেছে, যেনো কাজি সাহেব আবার চলে না যায়। ১০ মিনিট পর...। প্রিয়া আর মামুন তাকিয়ে দেখে, আদি অনিমাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়, অনিমা বধুর মতো সেজেছে। কিন্তু ও তো শাড়ি পড়তেই পারে না, নিশ্চই আদি পড়িয়ে দিয়েছে। প্রিয়া আর মামুন একে অপরেকে ইশারায় বোঝাচ্ছে,,,, জামাই তো ১০ মিনিটেই মেয়েকে রাজি করিয়ে, সাজিয়ে নিয়ে আসছে। এটা একটা ভালো দিক। অনিমা চুপ করে বসে আছে, কাজি সাহেব দুজনের বিয়ে পড়িয়ে দিলেন। আদি আর আনিমা এখন স্বামী স্ত্রী।

--বাবা, আজ ওকে নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই, তোমরা বরং এখানেই থাকো, মেয়েটা হুট করে ওবাড়িতে গিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে না। (মামুন)
--সমস্যা নেই। ওকে আমি সামলে নেবো।
--পাপা, আমি যাবো না।(অনিমা)
--ও তো এখনো ছোট, কয়েকদিন এখানেই থাকো না।
--কিন্তু......
--কোনো কিন্তু না, তোমাদের এখানে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

আদি আর কিছু বললো না। ধীরেধীরে রাত হয়ে এলো। আজ রাতটা প্রতিদিনের মতো না। সারাদিনের বৃষ্টির পর যেনো প্রকৃতি হঠ্যাৎ করেই চুপ হয়ে গেলো, কুকুরের চিৎকার, বিড়ালের গোঙানোর আওয়াজ, চারদিকের শুনশান পরিস্থিতি পুরো পরিবেশটাকে ভয়ংকরা রুপে পরিনত করেছে।

রাত ১২;৩০ মিনিট। মামুন আর প্রিয়া ঘুমাতে যাচ্ছিলো। তখনই অনিমা আসে....
--অনিমা? তুই এখানে কেনো?(প্রিয়া)
--আমি ওনার সাথে থাকবো না।
--কেনো? কি হয়েছে?
--আমার অসস্তি লাগছে। আমি এখানে ঘুমাবো।
--দেখো মেয়ে কি বলে, আজ না তোর বিয়ে হলো, বিয়ের পর স্বামীর সাথেই থাকতে হয়। যা ওর কাছে যা। ও মনে করবে মেয়েটা পাগল।
--না, আমি যাবো না।
--এখন কিন্তু মারবো, যা
--আহ, তুমিও পাগল হয়ে গেছো.. ও এখনো ছোট, না বুঝাটাই স্বাভাবিক। আমি বুজাচ্ছি।(মামুন)
--না পাপা, সত্যিই আমার অসস্তি লাগছে।
--চলো..
মামুন অনিমাকে নিয়ে টিভির রুমে আসলো।
--বসো।
--পাপা, আমি ওনার সাথে থাকবো না।
-- শুনো মা, ও এখন তোমার স্বামী, এরপর তো সারাজীবন তোমাদের একসাথেই থাকতে হবে, তাই না।
--কিন্তু ওনার সামনে গেলেই যেনো আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।
--দেখো পাগলী কি বলে, এটা ও শুনলে কতো কষ্ট পাবে জানো?
--সত্যি বলছি পাপা।
--নতুন বিয়েতো, তাই এমন লাগছে। ধীরেধীরে আদির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে। যাও
--না
--যাও বলছি
--যাচ্ছি... তোমার সংগে কথাই বলবো না আর।
--দেখা যাবে, যাও।

--অনিমা গেছে?(প্রিয়া)
--হুম, বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়ে দিলাম।
--যাক ভালো হয়েছে। আজই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
--তাই যেনো হয়।
--আচ্ছা, আপনার কি আমাদের সেই রাতটার কথা মনে আছে?
--হুম, একটা অভিশপ্ত রাত ছিলো। সেই রাত থেকেই অনেক মানুষ মারা যায়, তুমিও আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছিলে আমার আমানত রক্ষা করার জন্য। আজ এতোগুলো বছর পার হয়ে গেলো। আমার সেই ছোট্ট আমানতটা অন্যের হাতে তুলে দিলাম। আল্লাহ যেনো আমার মেয়েটাকে সুখে রাখে। যেনো বিয়ের পর আমাদের মতো কঠিন মুসিবতে না পড়ে।
--কিচ্ছু হবে না আমাদের মেয়েটার, চিন্তা করতে করতে চুল পেকে গেছে আপনার, ঘুমান।
--আজ আমি শশুড় হয়ে গেলাম। আর তুমি শাশুড়ি। ভাবছি.......
--কি ভাবছেন?
--Now need to be processing for 3 numbers.....
--আপনার মাথা ঠিক আছে?
--সমস্যা কি?
--মেয়ে বিয়ে দিছেন, নাতিনাতনির জন্য অপেক্ষা করেন, নিজে আর ঘোড়া সাজতে জাইয়েন না। রং ঢং না করে ঘুমান।
--আচ্ছা আচ্ছা।
সকালে মামুন দাত ব্রাশ করতে করতে বাহিরে যায়।
বাহির থেকে মেয়ের রুমের দিকে চোখ পড়তেই দেখে আদি...........

লেখক :- আবদুল্লাহ আল মামুন

Post a Comment

Give your opinion, please!

নবীনতর পূর্বতন