ভালোবাসার শক্তি
পর্ব:-২ (সিজন-২)
--দেখো মা, তোমাকে একদিন বলেছিলাম, কখনো কাউকে খারাপ কিছু বলবে না, আর তুমি সেটাই করছো? কেনো?
--সরি পাপা, আর বলবো না, এইযে কানে ধরলাম।
--তোমার সাথে তোমার পাপা আর কথা বলবে না, তুমি পাপার কথা শুনো না।
--পাপা এই যে কানে ধরলাম তো, আর কক্ষনো বলবো না।(কাঁদো কাঁদো মুখে)
--যদি বলো?
--বললে আমাকে মেরো, আমি আর বলবো না।
--মনে থাকে যেনো।
--আচ্ছা।
অনিমা পাপার বাধ্য মেয়ে, অয়ন আর পাপাকে খুব ভালোবাসে। মাকে যে ভালোবাসেনা তা কিন্তু নয়, ধীরে ধীরে অনিমা বুঝতে পারে ওর মধ্যে কিছু একটা আছে, ও যা বলে তা হয়ে যায়। অনিমার স্মৃতিশক্তি এবং ঘ্রানশক্তি খুবই প্রখর। অয়ন একবার খেলতে খেলতে দুরে কোথায়ও চলে যায়, অনিমা ভাইয়ের গন্ধ শুকে তাকে খুজে বের করে ফেলে।
একবার দুষ্টুমি করার কারনে প্রিয়া অনিমাকে মেরেছিলো, যেমনটা সাধারন মায়েরা শাসন করে। এজন্য অনিমা খুব কেঁদেছিলো, সেদিন রাতে প্রিয়া ঘরের মধ্যে ৩য় কাউকে অনুভব করেছিলো, যে সারারাত প্রিয়াকে ঘুমাতে দেয়নি। নানা ভাবে প্রিয়াকে ভয় দেখায়। মামুন অনিমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, মাকে কিছু বলেছে কিনা, কিন্তু অনিমার এক কথা, সে কিচ্ছু বলেনি।
--অনিমাকে জিজ্ঞেস করলাম, ও তোমাকে নিয়ে কোনো কিছুই বলেনি।(মামুন)
--আপনি কি পাগল হলেন? ও আমাদের মেয়ে, আমাদের নিয়ে কিছু বলবে?(প্রিয়া)
--তাহলে কাল রাতে এসব কি ছিলো?
--তা জানি না, পুরো রুমটা যেনো ছায়া ছায়া খেলা করছিলো।
--আমার মনে হয়, অনিমা কিছু না বললেও, ওর কষ্ট পাওয়ার কারনে এমন হয়েছে।
--মানে?
--মানে কবিরাজ মারা যাওয়ার কারন ছিলো অনিমা, অয়ন হারিয়ে যাওয়ায় ও খুব কষ্ট পাচ্ছিলো, এবং কবিরাজ মারা যাবে এমন কিছু অনিমা বলেনি, তবুও কবিরাজ মারা যায়, এর মানে বুঝতে পারছো?
--হুম, আমারও তাই মনে হচ্ছে, তাই বলে মেয়েকে শাসনও করা যাবে না?
--তুমিতো জানোই, আমার মেয়েটা আর ৮-১০টা মেয়ের মতো স্বাভাবিক নয়, একটু দেখেশুনে চলতে হবে। তাছাড়া মেয়েটা এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে, সবকিছু বুঝতে শিখেছে, ওর গায়ে হাত তুলো না। বুঝিয়ে বলো, না পারলে আমাকে বলিও।
--আমি ওর মা, কেনো আমি ওর গায়ে হাত তুলবো? যদিও হাত তুলি, সেটা কি পরিমান তুলতে হবে তা মা হিসেবে আমার জানা আছে, তাই বলে মাাকেও মেয়ের শক্তির জ্বালে পড়তে হবে?
--এসব আর ভেবো না, আমি ওকে বুঝিয়ে বলবো, এখন একটু ঘুমিয়ে নাও, রাতে ঘুমাতে পারোনি।
--সংসারের কাজ কর্ম সব পড়ে আছে, আর আপনি বলছেন ঘুমাতে, দুপুরে খাবেন কোথায় থেকে শুনি।
--আজ খাবার বাহির থেকে আনিয়ে নিবো, আর বাকিটা বাবা মেয়ে মিলে করে নিবো, তুমি ঘুমাও।
--এখন ঘুম আসবে না।
--আমি আছিতো, ঘুম পাড়িয়ে দিবো। তুমি শুয়ে পড়ো।
প্রিয়া শুয়ে পড়ে, মামুন প্রিয়ার চুলে বিনি কেটে দিচ্ছে,,
--এই যে, আপনার হাতটা কন্ট্রোলে রাখুন, হাত কই যায়?(প্রিয়া)
--সরি সরি, ভুলে চলে গেছে।
--এই বুড়া কালেও আপনি......... আর কতো?
--শুনো, ঘোড়া আর পুরুষরা কখনো বুড়া হয় না। আমরা সব সময় স্টং।
--হইছে, এই বয়সে এতো রোমান্টিকতা দেখাতে হবে না, কয়দিন পর মেয়ে বিয়ে দিবেন, এখনো নিজেকে বুড়া ভাবেন না,
--ভাবছিলাম ৪ বাচ্চার বাপ হবো,, কিন্তু কপালে নেই।
--এতো শখ? আসেন.......
--আরে ছাড়ো.. কি করছো...??????????
রাতে অনিমা ঘুমাচ্ছিলো, প্রতিরাতের মতোই মামুন মেয়েকে দেখতে তার রুমে যায়, মামুন খেয়াল করলো অনিমা ঘুমের মধ্যে কেমন ছটফট করছে। মামুন অনিমাকে ডাকা শুরু করে, কিন্তু অনিমা উঠছে না। কোনো উপায় না পেয়ে মামুন মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে জাগায়। অনিমা চোখ মেলেই বাবাকে দেখে, বাবাকে ঝাপটে ধরে কেঁদে দেয়।
--কি হয়েছে অনিমা? কাঁদছো কেনো? বাজে স্বপ্ন দেখেছো?
--হ্যা পাপা...
--ভয় পেয়ো না, এইতো পাপা চলে এসেছি।
--পাপা, ও আমাকে ঘুমাতে দেয় না।
--কে?
--ওই বুড়ো লোকটা, ও আমার গলা চেপে ধরেছে। আমি নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না।
--না মা, এমন কিচ্ছু হয় নি, এটা স্বপ্ন। ভয় পেয়ো না, ঘুমিয়ে পড়ো।
--আমার ভয় করছে পাপা,
--আর ভয় করবে না, পাপা ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি। চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ো।
--আমি এখানে ঘুমাবো না, তোমাদের সাথে ঘুমাবো।
--অয়ন ঘুমাচ্ছে, জায়গা হবে না। পাপা তোমার সাথেই আছি, ঘুমাও।
--চলে যাবে নাতো?
--না, এবার ঘুমাও।
--আচ্ছা।
মামুন সারারাত মেয়ের সাথেই ছিলো, সেই রাতে আর তেমন কোনো সমস্যা হয় নি। কিন্তু মাঝে মাঝে অনিমা চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠে যেতো। মামুনের ব্যাপারটা অস্বাভাবিক মনে হয়। কারন প্রতিবারই নাকি ওই কবিরাজ ওর গলা চেপে ধরে। এক স্বপ্ন কিভাবে বার বার দেখে? এই স্বপ্নের মধ্যে কোনো সত্য লুকিয়ে নেইতো? অনিমা বুঝতে পারছে এটা কেনো হচ্ছে, কবিরাজ হয়তো তার মৃত্যুর বদলা নিতে ফিরে এসেছে।
মামুন অনিমার মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে। বাবা আর ভাইয়ের সাথে সারাদিন দুষ্টমি করা মেয়েটা হঠ্যাৎই চুপ হয়ে যায়। সবসময় নিজের ঘরেই থাকে। মেয়ে বড় হয়েছে, তার প্রাইবেসি প্রয়োজন, এই চিন্তায় মামুনও মেয়েকে এতো কিছু জিজ্ঞেস করে না। কিন্তু কোনো সমস্যা হলে অন্তত মাকে তো বলতে পারে। মাকেও কিছু বলে না। তাহলে কি অনিমা নিজের শক্তির মধ্যে নিজেই ফেসে যাচ্ছে?
নাকি এমন কিছু হচ্ছে যা সবার চিন্তার বাইরে। এক মনোমুগ্ধকর বিকেলে মামুন অয়নকে নিয়ে ব্যালকনিতে বসেছিলো। বাবা ছেলে খুব দুষ্টমি করছিলো। ২০ সেকেন্ডের মধ্যে চারদিক অন্ধকার হয়ে তুফান শুরু হয়। মামুন অয়নকে নিয়ে ঘরে চলে আসে। পুরো ঘর যেনো তুফান উড়িয়ে নিয়ে যাবে এমন অবস্থা। অনিমা সদর দরজার সামনে চেয়ার নিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। মামুন আর প্রিয়া অবাক হয়ে মেয়েকে দেখছে। মামুন অনিমার সামনে আসে...
--অনিমা, কি হয়েছে? এখানে বসে আছো কেনো মা?
--পাপা, রুমে চলে যাও।(চোখ বন্ধ করেই)
--কেনো? কি হয়েছে?
--ওরা আসছে, তাড়াতাড়ি রুমে যাও, দরজাটা আটকে দিও।
মামুন যেনো আন্দাজ করতে পারছে, খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে। প্রিয়া আর অয়নকে নিয়ে মামুন রুমে চলে আসে, মামুন রুমে ঢুকে বুঝতে পারে রুমের বাহিরে যেনো তুফান শুরু হয়েছে। মেয়ের কথা চিন্তা করে মামুন দরজা খুলার চেষ্টা করে, কিন্তু দরজা বাহির থেকে লাগানো। কিছুক্ষণ পর সব শান্ত হয়ে যায়, দরজা নিজে নিজে খুলে যায়। অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে চেয়ারে বসে আছে।
--অনিমা, কি হয়েছে? (মুখটা উপরে তোলে)
অনিমার চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে, মেয়েটা সম্পূর্ণ অজ্ঞান। মামুন মেয়েকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে আসে। প্রিয়া বিলাপ করে খুব কান্নাকাটি করছে। আল্লাহ, আমার মেয়েকে এ কেমন শক্তি দিলে, আমাদের সুখের সংসারে এ কোন অশান্তি নেমে এলো...
মামুন ভালোভাবেই বুঝতে পারছে, অনিমা তার এই ক্ষমতার জন্যই বিপদে পড়তে যাচ্ছে। কিভাবে বা কেন এই শক্তি অনিমার কাছে আসলো? প্রিয়া নাকি এই শক্তির উৎস? তাহলে প্রিয়ার কাছেই বা মায়া শক্তি কোথায় থেকে আসলো? প্রশ্নের জ্বালে মামুন ঘুরপাক খাচ্ছে। জ্ঞান ফিরলে অনিমা জানায় সে এ ব্যাপারে কিচ্ছু জানে না। সেতো ঘুমিয়ে ছিলো। মাঝে মাঝে অনিমার রুম থেকে অদ্ভুত আওয়াজ বের হয়।অদ্ভুত আচরন করে, যেই বাবা আর ভাইকে এতোটা ভালোবাসে, তাদের সাথেও এখন কথা বলে না।
মামুন সেই ১৫ বছর আগের তান্ত্রিককে খুজতে থাকে, যে তাকে পিশাচের হাত থেকে বাচিয়ে ছিলো কারন সে জানতো অনিমার ব্যাপারে, অন্য কোনো কবিরাজকে যে ভরসা করা যায় না। মেয়েকে কোনো ভাবেই বিপদে পড়তে দেওয়া যাবে না। মামুন এলাকার মুরুব্বিদের জিজ্ঞেস করে করে ওই তান্ত্রিককে খুজে বের করে। তান্ত্রিকের আস্তানায় মামুন, তান্ত্রিক একটা গাছের নিচে চোখ বন্ধ করে চুপটি করে ধ্যানে বসে আছে। মামুন তান্ত্রিকের সামনে এসে বসে।
--আমি জানতাম তুমি আসবে, তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।(তান্ত্রিক)
--কেনো?
--তোমার মেয়েকে বিপদের হাত থেকে বাচানোর জন্যই আমার কাছে এসেছো। তাইতো?
--জ্বি, আমার মেয়েটা খুব বিপদে।
--তোমার মেয়ে বিপদে নয়, বিপদে তুমি আর তোমার ছেলে।
--বুঝলাম না।
--তোমার মেয়েকে কেউ ছুতেও পারবে না, এবং তোমার স্ত্রীকেও। কারন ওদের ক্ষমতা আছে নিজেদের বাচাবার, বাকি আছো তোমরা।
--এখন কি করবো?
--তুমি কিছুই করতে পারবে না, যা করার তোমার মেয়েই করবে।
--ও কি করে করবে?
--যত তাড়াতাড়ি পারো মেয়ের বিয়ে দিয়ে দাও, স্বামীর ছোয়ায় তোমার মেয়ের সমস্ত শক্তি ধ্বংস হয়ে যাবে। এতে তোমাদের ওপর থেকে বিপদ কেটে যাবে।
--ওর বয়স মাত্র ১৫, এই বয়সে বিয়ে?
--এছাড়া কোনো উপায় নেই।
--এসবের কারন কি?
--কারন যোযো দুনিয়ায় এসে গেছে।
--যোযো কে?
--এক শয়তানি শক্তি, সেও আমাদের মতোই মানুষ, তাকে ধ্বংস করার জন্যই তোমার মেয়ের জন্ম। আবার যোযোর ক্ষমতাও কম না, সুযোগ পেলে সে তোমার মেয়েকেও মেরে ফেলতে পারে, এবং তোমার মেয়ের সব ক্ষমতা সে নিবে। কিন্তু সেটা এতো সহজ না, যদি তোমার মেয়ে ওকে সেচ্ছায় ক্ষমতা দান করে, তবেই সে ক্ষমতা পাবে। হয়তো সে এমন কিছু করবে যার জন্য তোমার মেয়ে ওকে সেচ্ছায় ক্ষমতা প্রদান করতে বাধ্য হবে।
--এর জন্য আমার মেয়ে কেনো?
--সবই ঈশ্বর ঠিক করে রেখেছেন, আমাদের হাতে কিছুই নেই।
--এর থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্য কোনো উপায় আছে?
--যোযের হাতে পড়ার আগে ওর বিয়ে দাও, এছাড়া কোনো উপায় নেই, সে তোমাদের ওপর আক্রমন ও করেছে, তোমার মেয়ের জন্য কিছু করতে পারেনি। আমি বলেছিলাম কখনো তোমার মেয়েকে কবিরাজ বা তান্ত্রিকের সামনে আনবে না, আমার কথা শুনো নি,
--এটা আমাদের অজানতেই হয়ে গেছে।
--তোমরা যেই কবিরাজ কে মরতে দেখেছিলে, সে এখনো মরেনি, প্রথমে তাকে খুজে বের করো।
--আমার চোখের সামনে ও এক্সিডেন্ট করেছে।
--না, ওটা তোমাদের চোখের ভুল, সেখানে কিচ্ছু হয়নি, কবিরাজ এখনো বেচে আছে, ওকে খুজো।
--ওকে পেলে কি করবো?
--তোমার মেয়ের সামনে এনে দিবে,
--এরপর...........
একটা ছুরি দিয়ে তান্ত্রিক নিজের হাতে নিজের গলা কেটে ওখানেই মারা যায়,
ঘটনাটা এতোটাই দ্রুত হলো যে মামুন এখনো ঘোরের মধ্যে আছে, কথার মাঝখানে কেনো উনি এমন করলেন?.............
লেখক :- আবদুল্লাহ আল মামুন
লেখক :- আবদুল্লাহ আল মামুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Give your opinion, please!